March 29, 2023, 9:31 pm

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন পোর্টাল
সংবাদ শিরোনাম :
গোয়ালন্দ থেকে পাকশী/ পদ্মার তলদেশ থেকে বালু উত্তোলন বন্ধের নির্দেশ পরিষদ আইনের ৩৩ ধারা বাতিল/ উপজেলায় ইউএনওরা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নন : হাইকোর্ট ঝিনাইদহে সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামী-স্ত্রী নিহত, আহত ৩ ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস’/ ৩০ মার্চ থেকে হাসপাতালেই ৩টা থেকে ভিজিট নিয়ে রোগী দেখবেন চিকিৎসকরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ে তোলার প্রত্যয় প্রধানমন্ত্রীর নিখোঁজের ২ দিন পর রুপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের এমডির গাড়ি চালকের লাশ উদ্ধার নৃশংস গণহত্যার সেই ২৫ মার্চ আজ ‘ইবির গুচ্ছে যাওয়া না যাওয়া/ দ্রুত সিদ্ধান্ত না নিলে বিপাকে পড়বে নতুন বর্ষের ভর্তি প্রক্রিয়া মাগুরায় সড়ক দূর্ঘটনায় দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত শুরু হলো মুসলামান স¤প্রদায়ের মহিমান্বিত মাহে রমজান, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর বাণী

ভোজ্যতেল/দাম বাড়ানোর প্রভাব পড়ে সাথে সাথে, কমানোর প্রভাব পড়তেই চায় না !

ড. আমানুর আমান, সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক কুষ্টিয়া/দি কুষ্টিয়া টাইমস/
সত্যিই অদ্ভুত এক ব্যবসা পরিবেশ বিদ্যমান এ বাংলাদেশে। যেখানে মুনাফার লাভ-লোভই একমাত্র লক্ষ্য। কোন আইন নেই, কোন ধর্ম নেই, মানবতাবোধের ব্যাপারটি তো সুদুর পরাহত। ব্যবসার এ বিসদৃশ এত প্রকাশ্য যে এ ভূ‚-খন্ডে সবারই এটা জানা। অন্য ভূ‚-খন্ডের মানুষ এটা জানে না কারন সেখানে এমন ঘটে না।
যদিও এটি দেশের সকল ব্যবসার ক্ষেত্রে সবসময়ের জন্য প্রযোজ্য তবে হালে এরকম বিষয় আবার প্রত্যক্ষ হয় যখন মাস দুয়েক আগে সরকার ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। দেখা গেল ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর সভা করার আগেই ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিল। অজুহাত অদ্ভুত–তারা বেশী দামে কিনে ফেলেছে। বস্তির অতি ক্ষুদ্র একজন টং মুদি দোকানীও যে কিনা বড়জোড় এক লিটারের ৫টি ক্যান তার দোকানে রাখে সেও লাফ দিয়ে দাম বাড়িয়ে দিল। আবার দুই মাসের ব্যবধানে যখন দাম কমানো হলো ঐসব টং মুদিরা মুখে কলুপ এটে দিয়ে দাম আর কমাতে চাইছে না। ভাব এমন সেও রাতারাতিই শত শত ক্যান তেল বেশী দামে কিনেছে। এই এরাই যখন মোবাইল কোর্ট যাচ্ছে সেখানে হাটুমুড়ে করজোড় করছে হুজুর আমরা তো দু’লিটারের ব্যবসায়ী। সত্যিই অদ্ভুত ব্যবসা এদেশে ; অদ্ভুত লোকেরা এ ব্যবসার সাথে নিয়োজিত। এরা সাধারণ কোন কিছু নয়, এরা এত অসাধারণ যে এদেরকে মিউজিয়ামে রেখে দিলে টিকিট কেটে লোকে বিদেশ থেকে দেখতে আসতো।
তবে হ্যাঁ এদের মাঝে ভাল মানুষ ব্যবসায়ী নেই তা নয়। তবে এরা হয়তো ঐসব ব্যবসা করেন না, করেন অন্য ব্যবসা। যার কারনে তারা চোখে পড়েন অন্য ক্ষেত্রে।
খবর হলো রাশিয়া আর ইউক্রেনের মধ্যকার যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ার দোহাই দিয়ে দেশেও সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছিল। যা ২০৫ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। দুই মাসের ব্যবধানে বিশ্ববাজারে সয়াবিনের দাম কমেছে ৩২ শতাংশ আর পাম তেলের দাম কমেছে ৪৮ শতাংশ। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশে তেলের দাম কমিয়েছে সরকার। আরও খবর হলো বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমায় গত ১৭ জুলাই বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটার প্রতি ১৪ টাকা কমিয়ে ১৮৫ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। এ দাম ১৮ জুলাই থেকেই কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মার্কেট ঘুরে নতুন দামে তেল বিক্রি হতে দেখা যায়নি। শুধু তাই নয়, কোথাও কোথাও সরকার নির্ধারিত দামে তেল কিনতে চাওয়া ক্রেতাদের সঙ্গে বাগবিতন্ডায় জড়াতে দেখা গেছে বিক্রেতাদের।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে গুদাম কিংবা খুচরা দোকানগুলোতে যে সয়াবিন তেল আছে তা আগের দামেই কেনা। তাই সেগুলো শেষ না হওয়া পর্যন্ত সরকার নির্ধারিত দামে তেল বিক্রি করা সম্ভব নয়। লোকসান দিয়ে তো কেউ ব্যবসা করবে না। নতুন দামে তেল পাওয়ার আগ পর্যন্ত আগের দামেই বিক্রি হবে। এর মানে হলো এরা শত শত লিটার তেল মজুত করে রেখেছিল। যা পুরোই অবৈধ। কিন্তু মজার যখন মোবাইল কোর্ট যায় এরাই দেখিয়ে দেয় তাদের কোন মজুত নেই। কি তামাশা ! কি মুনাফা লোভের প্রক্রিয়া ! এসবদের ধরে আগে মোবাইল কোর্টে সাজা দেয়া উচিত।
বিশ্বব্যাংকের ইনডেক্স মুন্ডির তথ্য মতে গতকাল ১৮ জুলাই পাম অয়েলের দাম কমে প্রতিটন বিক্রি হয়েছে ৮৬৬ ডলার ৭৫ সেন্ট, যা গত মে মাসে ছিল ১৭১৬ ডলার। সে হিসেবে পাম তেলের দাম কমেছে সাড়ে ৪৯ শতাংশ। সয়াবিন তেলের দাম একইদিনে কমে হয় ১ হাজার ৩২৪ ডলার ৫৪ সেন্ট। সে হিসেবে সয়াবিন তেলের দাম কমেছে প্রায় সাড়ে ৩২ শতাংশ।
আমাদের সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন রাজধানীসহ সারাদেশেই বোতলজাত সয়াবিন তেল এক লিটার ১৯৬ থেকে ১৯৮ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। আর অলি-গলির মুদির দোকানে বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা লিটার। অর্থাৎ বাড়তি দামেই ব্যবসায়ীরা তেল বিক্রি করছেন। পাঁচ লিটার বোতলের পুষ্টি, রূপচাঁদা, তীর, বসুন্ধরাসহ অন্য ব্র্যান্ডের তেল আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। এগুলো ৯৭০-৯৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর পামওয়েল বিক্রি হচ্ছে ১৫৫-১৫৮ টাকা লিটার।
একজন ক্রেতা তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করে জানান তিনি তেল কিনতে স্টোরে যান ২২ জুলাই সকালে। দোকানে ভোজ্যতেলের দাম জানতে চান। দোকানি সয়াবিনের লিটার ২০০ টাকা চান। তিনি দোকানীকে তেলের দাম তো কমে ১৮৫ টাকা হয়েছে, আপনি বেশি রাখছেন কেন? জবাবে দোকানী জানান যে বলেছে আপনি তার কাছ থেকে গিয়ে তেল নেন। ২০০ টাকার এক পয়সাও কম বিক্রি করব না।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঐ বিক্রেতা জানান ‘সরকার তেলের দাম কমিয়েছে ঠিক আছে। কিন্তু আমাদের কাছে কম মূল্যের মাল এখনও আসেনি। আমরা বেশি দামে কেনা তেল এখনো বিক্রি করছি। এই মাল তো কম দামে বিক্রি করতে পারব না।’
ঐ ক্রেতা জানান ‘দাম বাড়ানোর সময় সরকারের ঘোষণার আগেই দাম বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। আর কমানোর সময় শুরু হয় টালবাহানা।’
বিষয়টি নিয়ে আবার ঐ বিক্রেতার মুখোমুখি হলে তিনি দোকানের মধ্যে ঢুকে গিয়ে চুপচাপ বসে থাকেন।
একজন ক্রেতার বক্তব্য হলো চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে লিটারে তেলের দাম কমেছে তিনি এমন শেেনছেন ৪০ টাকার বেশি (পাইকারি)। অথচ সরকার কমাল মাত্র ১৪ টাকা। আবার ব্যবসায়ীরা তাও মানছে না, বিক্রি করছে আগের দামে।
ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের নেতা ও সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিত সাহা দৈনিক কুষ্টিয়াকে জানানসব ব্যবসায়ীর হাতেই কম মূল্যের তেল পৌঁছে যাওয়ার কথা। তবে তিনি জানান একটু সময় লেগে যাবে হয়তো।
ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন গতকাল এক চিঠিতে বাণিজ্য সচিবকে জানিয়েছিল বৃহস্পতিবার (আজ) থেকে সরকার-ঘোষিত কম মূল্যে তেল পাওয়া যাবে।
কিন্তু আজ শুক্রবার বাজারে এর প্রতিফলন পাওয়া যায়নি।
ব্যবসায়ীরা জানান, খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে এখনো সরকার-ঘোষিত দামে তেল সরবরাহ করেনি কোম্পানিগুলো। মিল গেট থেকে তেল ছাড়া হলে খুচরা বাজারে ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে এর প্রভাব পড়বে। অর্থাৎ কম দামে তেল পেতে আরও ৫-৭ দিন লেগে যেতে পারে।
ক্যাবের তথ্যমতে, গত রমজানের ঈদের পর ৫ মে দেশে ভোজ্যতেলের দাম সরকার পুনঃনির্ধারণ করেছিল। ওই সময়ে সয়াবিনের দাম লিটার প্রতি ৩৮ টাকা বাড়ানো হয়েছিল। এরপর গত ৯ জুন মিল পর্যায়ে ভোজ্যতেলের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে এক লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম মিলগেটে ১৮০ টাকা, পরিবেশক পর্যায়ে ১৮২ টাকা ও সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৮৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম মিলগেটে ১৯৫ টাকা, পরিবেশক পর্যায়ে ১৯৯ ও সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ২০৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এক লিটারের খোলা পাম অয়েলের (সুপার) দাম মিলগেটে ১৫৩ টাকা, পরিবেশক পর্যায়ে ১৫৫ ও সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৫৮ টাকা করা হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে তিন মাসের ব্যবধানে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম কমেছে ২০০ থেকে ৪৯০ ডলার। অথচ ব্যবসায়ীরা এক মাসে দু’দফায় প্রতি লিটার সয়াবিনের দাম বাড়িয়েছেন ৫১ টাকা।
তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৯ সালে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের গড় মূল্য ছিল টনপ্রতি ৭৬৫ ডলার। ২০২০ সালে দাম ছিল ৮৩৮ ডলার এবং ২০২১ সালে সয়াবিনের টনপ্রতি দাম ছিল ১৩৮৫ ডলার। কিন্তু, চলতি বছরের মার্চে একপর্যায়ে তা বেড়ে যায়। মার্চে বিশ্ববাজারে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম হয় ১৯৫৬ ডলার।

 

 

নিউজটি শেয়ার করুন..


Leave a Reply

Your email address will not be published.

পুরোনো খবর এখানে,তারিখ অনুযায়ী

MonTueWedThuFriSatSun
  12345
6789101112
2728293031  
       
  12345
2728     
       
      1
3031     
   1234
19202122232425
       
293031    
       
    123
45678910
       
  12345
27282930   
       
14151617181920
28      
       
       
       
    123
       
     12
31      
      1
2345678
16171819202122
23242526272829
3031     
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
242526272829 
       
© All rights reserved © 2021 dainikkushtia.net
Design & Developed BY Anamul Rasel