March 29, 2024, 4:47 am

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন পোর্টাল

লকডাউনের দেড় মাস/ ৯৫ শতাংশ কৃষকের কাছেই কোনো সহায়তা পৌঁছেনি : ব্র্যাক গবেষণা

দৈনিক কুষ্টিয়া প্রতিবেদন, ব্রাকের রির্পোটের আলোকে/
করোনায় লকডাউনের দেড় মাসে ৯৫ শতাংশ কৃষকই সরকারি অথবা বেসরকারিভাবে কোনো ধরনের সহায়তা পাননি।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। বাজার ব্যবস্থাপনায় কী ধরনের সমস্যা হয়েছে এবং কৃষকের অবস্থা কী তা জানার জন্য দুটি পৃথক গবেষণা করে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে ব্র্যাক। ্এ সময়ে আয় কমায় ৫৬ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকার ওপরে ক্ষতি হয়েছে কৃষকের।
বৃহস্পতিবার (৪ জুন) ব্র্যাক আয়োজিত ‘ইমপ্যাক্ট অব কোভিড-১৯ প্যান্ডেমিক অন এগ্রিকালচার অ্যান্ড ইমপ্লিকেশন্স ফর ফুড সিকিউরিটি’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনায় এ প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদন তৈরির জন্য লকডাউনের শুরু থেকে মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত ৬৪ জেলার ১৫৮১ কৃষকের সঙ্গে কথা বলেছেন ব্র্যাকের প্রতিনিধিরা।
প্রতিবেদন তুলে ধরে গবেষক নাহারিন সারওয়ার বলেন, প্রতি তিনজন কৃষকের একজন বলেছেন আয় কমেছে। পোল্ট্রি খামারিদের তিনজনের দুজনই জানিয়েছেন আয় কমেছে। অর্থের পরিমাণে সর্বোচ্চ ক্ষতি হয়েছে মাছ চাষিদের। কৃষি ও খামারিদের গড়ে আয় কমেছে দুই লাখ সাত হাজার ৯৭৬ টাকা। দেশের সব কৃষক ও খামারকে বিবেচনায় আনলে পুরো দেশে দেড় মাসে কৃষকের আয় কমেছে ৫৬ হাজার ৫৩৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।
‘ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার বিষয়ে ৪২ শতাংশ কৃষক জানিয়েছেন তারা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেননি। ২২ শতাংশ সঞ্চয় ও সম্পদ থেকে খরচ করেছেন এবং তাদের উৎপাদন চালিয়ে গেছেন। ১১ শতাংশ উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছেন। বিক্রি করতে না পারায় ২ ভাগ সম্পূর্ণ বন্ধ কর দিয়েছেন।’
নাহারিন সারওয়ার বলেন, ৯৫ শতাংশ কৃষক এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের সাহায্য-সহযোগিতার আওতায় আসেনি। সরকারি-বেসরকারি কোনো পর্যায় থেকে তারা সাহায্য পাননি। তাই ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা অনিশ্চয়তায় রয়েছেন।
‘৮২ শতাংশ কৃষক মনে করেন এ সমস্যা খুব দ্রুত সমাধান হবে না। সমস্যা দীর্ঘ হলে পরবর্তী বছরের উৎপাদনের জন্য ৪১ ভাগ কৃষক ঋণ নেবেন। ১৮ শতাংশ কৃষক সঞ্চয় ও সম্পদ ভেঙে জীবন ধারণ করবেন। ১৮ শতাংশ জানেন না তারা কী করবেন। ১৪ শতাংশ কৃষকের অন্য ব্যবসা বা আয়ের পথ রয়েছে।’
করোনার শুরুর দিকে রিটেইলারা ভালো বিক্রি করতে পারলেও কৃষকদের কাছে সুফল যায়নি বলে জানিয়েছে ব্র্যাক। ৮৮ শতাংশ কৃষক জানিয়েছেন এ সময়ে তারা বিক্রি, বিপণনে নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন। মাছ চাষিদের ১০০ ভাগই জানিয়েছেন তারা কোনো না কোনো সমস্যায় পড়েছেন।
তিনি বলেন, যখন সাধারণ ছুটি শুরু হলো, তখন হঠাৎ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য চাল, ডাল, তেলের বাজার ঊর্ধ্বমুখী হয়ে যায়। এ সময় সেল প্রায় ৩০০ ভাগ পর্যন্ত বাড়ে।
‘কিন্তু এপ্রিলের শেষ দিকে মানুষের কাছে অতিরিক্ত মজুত হয়ে যায়, তখন বাজারটা আবার পড়তে শুরু করে। মোটা চাল, ডাল এবং তেলের দাম ও চাহিদা দুই-ই নিচের দিকে চলে আসে। এ সময় হোলসেলার ও রিটেইলারদের লসে পণ্য ছেড়ে দিতে হয়েছে। কারণ বাড়তি সময় তারা স্টক ধরে রাখতে পারছিলেন না। এ সময় বাজারে বিক্রি মোটামুটি শূন্যের কোঠায় চলে আসে।’
এ গবেষক বলেন, এপ্রিলের শুরু থেকে মে’র শুরু পর্যান্ত মুরগি, দুধের চাহিদা প্রায় ছিল না। যে কারণ এসব পণ্যের দাম বেশ কমে যায়। আমরা দেখেছি খুচরা পর্যায়ে পোল্ট্রির দাম ১০-১২ শতাংশ পর্যান্ত কমেছে। এ কারণে অনেক খামারি নতুন করে উৎপাদনে অনাগ্রহী হয়েছেন। ফলে উৎপাদন অনেকাংশ কমেছে।
‘১৭ ভাগ পোল্ট্রি খামারি দাম না পাওয়ায় উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছেন এবং ২ শতাংশ উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছেন।’
পণ্যের উৎপাদন কম হওয়ায় মে’র শুরু থেকে বাজারে প্রভাব পড়া শুরু করে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে মে’র শুরুতে পোল্ট্রির দাম ২৬ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
নাহারিন সারওয়ার বলেন, কৃষকরা এ সময় দ্বিমুখী চাপের সম্মুখীন হয়েছেন। একদিকে তাদের কাছে থাকা পণ্যের দাম কমেছে। পোল্ট্রির দাম কমেছে প্রায় ৪৪ শতাংশ, দুধের দাম কমেছে ২২ শতাংশ। সবজির ৩৮-৯০ শতাংশ দাম কমেছে। অন্যদিকে বীজ, সার এবং পোল্ট্রির খাদ্যের দাম বেড়েছে। লোকাল ভুসির দাম বেড়েছে ১৯ শতাংশ, খোলের দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশ এবং পোল্ট্রির ওষুধের দাম বেড়েছে ৫-৭ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৬৬ শতাংশ কৃষক জানিয়েছেন তাদের কম দামে পণ্য বিক্রি করতে হয়েছে। কৃষকরা জানিয়েছেন, বাজার বন্ধ থাকায় আড়তদার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেননি। ৫২ শতাংশ কৃষক জানিয়েছেন পণ্য বিক্রির জন্য মার্কেটে পৌঁছাতে পারেননি। ফলে তারা যতটুকু দাম পেয়েছেন, সেই দামে পণ্য ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন।
সমস্যা সমাধানে ৬৮ শতাংশ কৃষক সহজ শর্তে ঋণ সহায়তা চেয়েছেন। ৫৬ শতাংশ তাদের পণ্যের যে মূল্য কমেছে, সেই মূল্য ফেরত চান। ৪৮ শতাংশ ন্যায্যমূল্যে সার, বীজ, কীটনাশক এবং ফিড পাওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
সরকারের প্রণোদনা সঠিক মানুষের হাত পর্যন্ত পৌঁছানো কতোটুকু সম্ভব? সে বিষয়ে ব্র্যাকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৬৪ শতাংশ কৃষক জানেন সরকার তাদের জন্য প্রণোদনা দিয়েছেন। কিন্তু এ ৬৪ শতাংশের ৭৯ শতাংশই জানেন না প্যাকেজ কীভাবে গ্রহণ করতে হবে। তাদের মধ্যে কেউ মনে করেন কৃষি অফিস থেকে, আবার কেউ মনে করেন ঢাকা থেকে সুবিধা গ্রহণ করতে হবে।
মোট চাষির ৩৯ শতাংশ এবং ভূমিহীন ও বর্গা চাষিদের ৭১ শতাংশের কোনো ব্যাংক হিসাব নেই। সুতরাং তারা কীভাবে সাহায্য গ্রহণ করবেন, সে বিষয়ে সমস্যা রয়েই যাচ্ছে। ২০ শতংশ কৃষকের পূর্বে ব্যাংক ঋণ নেয়ার অভিজ্ঞতা আছে।
সমস্যা সমাধানে ৪ সুপারিশ
>> কৃষকের প্রণোদনা কৃষকবান্ধব হতে হবে। এ জন্য কৃষকের হাতে সহজে টাকা পৌঁছাতে এনজিওর সাহায্য নেয়া যেতে পারে।
>> কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি পণ্য কিনতে হবে। কৃষকের কাছ থেকে কেনা সবজি, দুধ ওএমএস ও রিলিফের কাজে ব্যবহার করা যায়।
>> কৃষিতে জড়িত অন্যান্য খাতে (যেমন- বীজ, সার, খাদ্য, পরিবহন) সহায়তা দেয়া উচিত। পোল্ট্রি ও মাছের সাবসিডিয়ারি ভালো হওয়া দরকার।

নিউজটি শেয়ার করুন..


Leave a Reply

Your email address will not be published.

পুরোনো খবর এখানে,তারিখ অনুযায়ী

MonTueWedThuFriSatSun
    123
25262728293031
       
   1234
26272829   
       
293031    
       
    123
25262728293031
       
  12345
27282930   
       
      1
9101112131415
3031     
    123
45678910
11121314151617
252627282930 
       
 123456
78910111213
28293031   
       
     12
3456789
24252627282930
31      
   1234
567891011
19202122232425
2627282930  
       
293031    
       
  12345
6789101112
       
  12345
2728     
       
      1
3031     
   1234
19202122232425
       
293031    
       
    123
45678910
       
  12345
27282930   
       
14151617181920
28      
       
       
       
    123
       
     12
31      
      1
2345678
16171819202122
23242526272829
3031     
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
242526272829 
       
© All rights reserved © 2021 dainikkushtia.net
Design & Developed BY Anamul Rasel