November 12, 2024, 6:55 pm
এস.এম.শামীম রানা//*/
রোজার তৃতীয় দিন বিকেল বেলা। কুষ্টিয়া শহরের এনএস সড়ক; নবাব সিরাজ উদদৌলা সড়ক। কুষ্টিয়া শহরের প্রাণ এই সড়কটি। অন্য যে কোন বছরে এই সময়টা গমগম, জমজমাট থাকে এই সড়কটি। ইফতারের নানা পসরা সাজিয়ে ছোট-বড় ব্যবসা চলত সন্ধ্যা পর্যন্ত। কিন্তু এবার দৃশ্য একেবারেই অন্য। কোন কেউই বসেনি ইফতারের পসরা সাজিয়ে। এমনকি বন্ধ বড় বড় রেস্তোরাগুলোও বন্ধ। বন্ধ শহরের অভিজাত রেস্তোরাগুলোও। শহরের বিভিন্ন এলাকা—মজমপুর, চৌড়হাস, বড়বাজার, থানামোড় ঘুরে ইফতারি বিক্রয়ের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান তালাবদ্ধ দেখা যায়।
কারন বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে শুরু হয়েছে রমজান মাস।
প্রশাসনিক নিষেধাঙ্গায় এবার বসেনি কোন ইফতারি বাজার। কুষ্টিয়া শহরের অভিজাত ইফতারি বিক্রয় কেন্দ্র খেয়া, শিশির বেকারি, মৌবন মাশালা, বনফুড, কারামায়, পালকি, দিশাসহ কোথাও নেই জালি কাবাব, সুতি কাবাব, ঝলসানো খাসির রান , লুচি, পরোটা, কাচ্চি, তেহারি, মাঠা, হালিম, ইরানি জিলাপিসহ শত আইটেমের কোনো একটি ইফতার খাদ্য। রমজান মাস এলেই কুষ্টিয়াসহ শহরতলীর আশেপাশে মোড়ে মোড়ে দেখা যেত ইফতারের জমজমাট বাজার।
রমজানে কোনওভাবেই যেন ফুটপাতে ইফতার তৈরি ও বিক্রি না হয় সে ব্যাপারে তৎপর থাকতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন কুষ্টিয়ার পুলিশ প্রশাসন। তাই কুষ্টিয়া ঘুরে ফুটপাতে ইফতার তৈরি কিংবা বিক্রির দৃশ্য দেখা যায়নি।
অন্যদিকে ব্যক্তি ও সাংগাঠনিক উদ্যোগে নিম্ন আয়ের মানুষদের ইফতার বিতরণ করতে দেখা গেছে, রোটারী ক্লাব অব কুষ্টিয়ার উদ্যোগে রমজান মাসে প্রতিদিন ১হাজার মানুষের ইফতারি এবং রান্না করা খাবার বিতরণ করছে। রোটারী ক্লাব অব কুষ্টিয়ার উদ্যোগে এই মহত কাজে সহযোগীতা করছে কুষ্টিয়া জিলা স্কুল এসএসসি ব্যাচ ৯৮ ও খেয়া রেস্তোরাঁ।
বিথী হাসান নামে এক উদ্যোমী তরুণী তার বন্ধুদের সাথে নিয়ে নিম্ন আয়ের মানুষদের ইফতার সামগ্রী বিতরন করছে। এছাড়াও প্রথম রমজান থেকে নিম্ন আয়ের ও অসহায় দরিদ্র মানুষের মাঝে ইফতার উপহার সামগ্রী বিতরন করছে যুবলীগ নেতা মীর সাইফুল ইসলাম।
প্রতিদনি ১০০০ ইফতার প্যাকেট বিতরন বিষয়ে কুষ্টিয়া সম্মিলিত সামাজিক জোট এর পৃষ্ঠপোষক রোটারীয়ান অজয় সুরেকা বলেন , আমরা যদি ভালো কিছু করতে চাই, মানুষের জন্যে কল্যাণকর কিছু করতে চাই, তাহলে রোটারী হচ্ছে একটি উপযুক্ত জায়ড়া। কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবে আমরা সমাজের অসহায় দু:স্থদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। তাদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছি এবং এই রমজানে প্রতিদিন এক হাজার মানুষের মাঝে ইফতার ও খাবার তুলে দিতে পারছি। আর্তমানবতার সেবায় আমরা রোটারীয়ানরা সকলেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করছি।
মীর সাইফুল ইসলাম বলেন বন্ধুদের সহযোগীতায় অসহায় মানুষদের জন্য কাজ করছি সবাইকে সাথে নিয়ে ইফতার করার চেষ্টা করছি। তিনি এ কাজে সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানান।
বিথী হাসান বলেন সমাজের কিছু মানুষদের সহযোগিতা নিজে রান্না করে অসহায়দের মাঝে প্রতিদিন ৬০ জনের ইফতার বিতরন করছি।
কথা হয় এন এস রোডে বাজার করতে আসা ব্যবসায়ী তসলিম উদ্দিন এর সাথে বাহিরের ইফতারের প্রতি আগ্রহ কেমন জানতে চাইলে বলেন, সারাদিনের রোজার ক্লান্তি ভুলে যাই বিকেলে যখন পরিবার পরিজন নিয়ে কোনো রেস্টুরেন্টে ইফতারির জন্য আসতাম। কারণ রেস্টুরেন্টগুলোতে পাওয়া যেত হরেক রকম আইটেমের খাবার; যা বাসায় বানানো সব সময় সম্ভব না। তাই ভোজন রসিকদের জন্য রেস্টুরেন্টের ইফতারি এক অনন্য পাওয়া। এ বছর করোনার কারণে বাইরের ইফতারি বাজার বন্ধ রয়েছে। ভয়ে আমরাও বাইরের যে কোনো খাবার গ্রহণ করছি না। এমন পরিস্থিতিতে ইফতার ও সেহরি পার্টি তো ভাবতেই করতে পারছি না
মৌবনের স্বত্তাধিকারী হাবিবুল আলম জানান, এখন বেঁচে থাকাটা এখন বড় কথা। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশও আক্রান্ত। এখানে সকল ব্যবসা-বাণিজ্যেই একধরনের বিপর্যয় চলছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন অচিরেই এনি সমস্য থেকে মুক্তি ঘটবে।
Leave a Reply