January 25, 2025, 2:31 am
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির সময় আয় হওয়া হাজার কোটি টাকা সরকারের কোষাগারে জমা হচ্ছে না। এ টাকা চলে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে কর্মরত শিক্ষকদের পকেটে। কিছু অংশ পান কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বেশি আয় করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়ও কম নয়।
গত বছর গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় প্রাথমিকভাবে আবেদন করেছিল ৩ লাখ ৬০ হাজার ৪০৬ জন শিক্ষার্থী। এবার গুচ্ছ ফরমের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৫০০ টাকা। এবার মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য এক হাজার টাকা ফি দিয়ে ১ লাখ ৩৯ হাজার ২১৭ জন আবেদন করেছিল। তাতে শিক্ষার্থীদের ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৪ কোটি টাকা।
গত ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ হাজার ৩৫টি আসনের বিপরীতে পাঁচটি ইউনিটে ২ লাখ ৯০ হাজার ৪৮০ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেছিল। আবেদন ফি ছিল ১০০০ টাকা। আবেদনপিছু অনলাইন সার্ভিস চার্জ ও ব্যাংক পেমেন্ট সার্ভিস চার্জ বাবদ ৪৩ টাকা ৫০ পয়সা খরচ ছিল। এই খরচ বাদ দিলে আবেদন ফি থেকে ২৭ কোটি ৭৮ লাখ ৪৪ হাজার ১২০ টাকা সংগ্রহ করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যদিও এর অর্ধেকের কম পরীক্ষা আয়োজন করতে খরচ হয়েছে।
ভর্তি ফরম বিক্রি বাবদ আয় করা টাকা প্রায়ই বাটোয়ারা করে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে। নিয়ম হলো, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি ফরম বিক্রি করে যে টাকা আয় করবে, তার ৬০ শতাংশ পরীক্ষা সংক্রান্ত খাতে ব্যয় করতে পারবে। আর ৪০ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাগারে দিতে হবে। গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য এই নিয়ম প্রযোজ্য নয়।
গুচ্ছে অন্তর্ভুক্ত নয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। তারপরও তারা ভর্তি আবেদন থেকে আয় করা টাকার ৪০ শতাংশ কোষাগারে জমা দেয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) এক তদন্তে দেখা গেছে, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি ফরম বিক্রি বাবদ আয় করেছিল প্রায় ২০ কোটি টাকা। এর ৪০ শতাংশ বা প্রায় ৮ কোটি টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাগারে জমা হওয়ার কথা। ওই শিক্ষাবর্ষে ওই পরিমাণ টাকা কোষাগারে জমা হয়নি। ভর্তি-সংশ্লিষ্টরা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন।
এসব বিষয় নিয়ে বারবার কথা উঠলেও কান দিচ্ছে না কোন কতৃপক্ষ। ইউনিভার্সিটি গ্রান্টস কমিশন মাঝে মধ্যে সরব হয়। কিন্তু নানাবিধ চাপে তারাও চুপ হয়ে যায়। চুপ হয়ে যাওয়ার কারন হলো ঐ প্রতিষ্ঠানে যারা রয়েছেন তারাও কোন না কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক।
প্রশ্ন উঠছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর (অর্থাৎ দেশের মানুষের টাকায় চলা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর) সব কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যদি শত শত কোটি টাকা বরাদ্দ থাকতে পারে তাহলে ভর্তি বা বাছাই পরীক্ষা অনুষ্ঠানের জন্য কেন দু-এক কোটি টাকা পৃথক বরাদ্দ রাখা হয় না?
এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যে যার মতো অর্থ আদায় করে নানা উসিলায় শিক্ষক-কর্মচারীরা ভাগবাটোয়ারা করে নেয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের একজন কর্মকর্তা দৈনিক কুষ্টিয়াকে জানান নৈতিকতার স্বার্থে হলেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উচিত ভর্তিফরমের মূল্য কীভাবে নির্ধারিত হয় তা দেশবাসীর কাছে স্বচ্ছভাবে তুলে ধরা। ইউজিসি ভর্তি পরীক্ষাগুলো থেকে কতো আয় করে তাও বিশদে জানানো উচিত ইউজিসির। কথায় কথায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নিজেদের বেতন-ভাতা কম বলে অনুযোগ করেন। যদি তাই মনে হয়, তবে তা বৃদ্ধির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়-শিক্ষকরা আন্দোলন করুক, সরকারের সঙ্গে দেন-দরবার করুক, তারপর বেতন-ভাতায় না পোষালে চাকরি ছেড়ে চলে যাক। সমাজের যোগ্যতর মানুষ যদি হয়ে থাকেন, সমাজের জন্য মূল্যবান মানুষ যদি হয়ে থাকেন নিশ্চয়ই রাষ্ট্র যে বেতন দেয় তার চেয়ে বেশি আয় তারা করতে পারবেন, বেশি সম্মান তারা পাবেন, কিন্তু দয়া করে ভর্তি পরীক্ষার নামে সাধারণ মানুষের পকেট কেটে শিক্ষিক-কর্মচারীদের অর্থ সংস্থানের আয়োজন বন্ধ করা হোক।
শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সম্মানী ভাতার বিষয়ে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘শিক্ষকদের আলাদা সম্মানী সব জায়গায় থাকে, তাই সেটা এখানেও থাকতে পারে। কিন্তু সেটার একটা গ্রহণযোগ্য মাত্রা থাকা দরকার।’
নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাঈদ ফেরদৌস বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষার সম্মানী বাবদ বছরের পর বছর ধরে আমরা (শিক্ষকরা) যে অর্থটা নিচ্ছি, সেটা অবশ্যই আমাদের ভেবে দেখা উচিত। ধরে নিলাম পরিশ্রমের জন্য শিক্ষকদের সম্মানী দেওয়া উচিত। কিন্তু সেই টাকার পরিমাণটা এমন হবে কেন, যা শুনে একজন সাধারণ মানুষ চমকে উঠবেন?’
ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে আমরা গুচ্ছ পদ্ধতির প্রবর্তন করেছি। আগামী বছর থেকে একটা মাত্র পরীক্ষার মাধ্যমে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরিকল্পনা করা হয়েছে। তা হলে শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফরম কেনার খরচ কমবে। এরপরও বলব, আমাদের মানসিকতা বদলাতে হবে। তখন অনেক কিছুই করা সম্ভব।’
Leave a Reply