May 28, 2023, 6:08 am
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) নবীন ছাত্রীকে নির্যাতনে অভিযুক্তদের কথা শুনেছে গঠিত তিনটি তদন্ত কমিটি। কমিটি গুলোর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি ও হাইকোর্টের নিদের্শে করা কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের একটি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর শাহাদাত হোসেন জানান, সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে অভিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা ও তার সহযোগী ফিনান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের ছাত্রী তাবাচ্ছুম ইসলামকে প্রধান ফটক থেকে নিয়ে আসা হয় আইন বিভাগে। সেখানে সাড়ে ১০টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটির প্রধান আইন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেবা মন্ডলের নেতৃত্বে অভিযুক্তদের বক্তব্য শোনা হয়।
পরে রেবা মন্ডল সাংবাদিকদের বলেন তারা দুদিনে মোট তিন জনের বক্তব্য নিয়েছেন। কি পেয়েছেন সেটা তো বলা যাবে না। তদন্ত রির্পোট তারা যথাসময়ে জমা দিবেন। সেখানেই তাদের বক্তব্য থাকবে।
হল প্রশাসনের করা কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন প্রফেসর আহসানুল হক আম্বিয়া। তিনি জানান রির্পোট জমা দেয়ার আগে কোন বক্তব্য নৈতিকতা পরিপন্থী। তারা কতৃপক্ষের কাছে সবকিছু জানাবেন।
ইবির দেশরতœ শেখ হাসিনা হলের গণরুমে গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে সাড়ে চার ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করার অভিযোগ করেন নবীন ওই ছাত্রী। তিনি অভিযোগে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরীর নেতৃত্বে তার অনুসারীরা নির্যাতন চালিয়েছেন। একপর্যায়ে তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ, গালাগাল, ময়লা জিনিসপত্র জিহ্বা দিয়ে চাটানোসহ অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে।
পরদিন ১৩ ফেব্রুয়ারি সকালে নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাড়িতে চলে যান ওই শিক্ষার্থী।
পরে হাইকোর্ট এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর নিরাপত্তা দেয়া, নির্দিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন ও অভিযুক্ত ছাত্রীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে রেখে তদন্ত কাজ চালানোর আদেশ দেন। এরপরই গত বৃহস্পতিবার সানজিদা চৌধুরী ও তাবাচ্ছুম ইসলামকে হল থেকে বের করে দেয়া হয়।
অভিযুক্ত ইবি শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা প্রথম থেকেই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। তিনি বলছেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট।
ওই ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় উচ্চ আদালতের নির্দেশে আরও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেন, কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আ. ন. ম. আবুজর গিফারী, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা সুলতানা ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শাহবুব আলম।ি
এ কমিটিও সোমবার বক্তব্য গ্রহন করে। তবে সাংবাদিকদের সাথে তারা কোন কথা বলেন নি।
সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল, দেশরতœ শেখ হাসিনা হলে প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফুলপরীকে নির্যাতনের অভিযোগ সত্য কি না? এর জবাবে অভিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী ওরফে অন্তরা সাংবাদিকদের বলেন, ‘নো কমেন্ট’। আরেক নেতা তাবাসসুম বললেন, ‘যা বলার তদন্ত কমিটির কাছে বলেছি, এর বাইরে কিছু বলতে চাই না।’
সূত্র জানায়, সকাল ১০টায় অভিযুক্তদের ক্যাম্পাসে আসার কথা ছিল। তবে সকাল ৯টায় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন অভিযুক্তরা। পরে সকাল সাড়ে ৯টায় তাঁদের মীর মশাররফ হোসেন একাডেমিক ভবনে তদন্ত কমিটির আহ্বায়কের কক্ষে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেওয়া হয়। প্রথমে সানজিদাকে সকাল সাড়ে নয়টায় কক্ষে ডাকা হয়। এরপর বেলা সাড়ে ১১টায় বেরিয়ে পাশের রুমে বসে থাকেন। তিনি বের হওয়ার পর তাবাসসুম দুপুর পৌনে ১২টার দিকে রেবা মণ্ডলের কক্ষে প্রবেশ করেন। তিনি দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে বের হন। এরপরই আবার ওই কক্ষে সানজিদা প্রবেশ করেন এবং বেলা ১টা ২০ মিনিটে বের হন। আবার তাবাসসুমও বেলা ১টা ২৫ মিনিটে
এ সময় গণমাধ্যমকর্মীরা সানজিদার কাছে বিভিন্ন প্রশ্ন করে জানতে চান। প্রথমে তিনি কথা বলতে চাননি। একপর্যায়ে সানজিদা বলেন, ‘তদন্ত কমিটির সঙ্গে প্রথমে একবার কথা হয়েছে। এরপর চার পৃষ্ঠার লিখিত দেওয়া হয়েছে। ঘটনা সম্পর্কে তদন্ত কমিটি জানতে চেয়েছে। তদন্ত হচ্ছে, তদন্তের মাধ্যমেই সবকিছু জানতে পারবেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, শিক্ষার্থীদের অভিযোগ আপনি হলে ভয়ার্ত পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন। জবাবে সানজিদা বলেন, ‘তদন্ত করলেই সবকিছু জানতে পারবেন। প্রতিবেদন যা আসবে সত্যিটাই তো আসবে।’
Leave a Reply