March 29, 2023, 9:29 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
ইউক্রেনের অধিকৃত চার অঞ্চলকে রাশিয়ায় অর্ন্তভুক্ত করার পর কি করতে যাচ্ছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এটা এখন সবার বিবেচ্য বিষয়। পশ্চিমারা ব্যতিব্যস্ত ছিল ইউক্রেন রক্ষার দিকে। কিন্তু অধিকৃত চার অঞ্চল ইউক্রেন থেকে অনেক দুরে। এবং ধরেই নেয়া যেতে পারে ইউক্রেনের পুরো কাছে যেতে রাশিয়ার অনেক লাগবে। এমনকি আদৌ তা সম্ভব কি না সেটাও মাথায় রাখতে হবে।
পুতিন এটাকে লাখ লাখ মানুষের ইচ্ছা বলে অভিহিত করেছেন। যুদ্ধের পর থেকে এটা রাশিয়ার একটি অর্জন। যেখানে ইতোমধ্যে যুদ্ধবিরোধেী মনোভাব স্পষ্ট। এমনকি বিক্ষোভও চলছে। গণভোটের পর রাশিয়ার চিত্র দ্রæত বদলাবে বলেও মনে করেন অনেকে। কারন ইউক্রেনের লুহানস্ক, দোনেৎস্ক, জাপোরিঝিয়া ও খেরসন ইউক্রেনের প্রায় ১৫ শতাংশের একটি ভুখন্ড।
মনে করা হচ্ছে এ সপ্তাহের মধ্যেই রাশিয়ার সংসদে অনুমোদন পাবে।
পুতিন এটাকে বরেছেন ঐতিহাসিক ঘটনা। ওই অঞ্চলগুলোর জন্য রাশিয়ার অনেক প্রজন্ম লড়াই করেছে। এসময় ইউক্রেন ও পশ্চিমা দেশগুলোকে হুমকি দিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, তিনি চান কিয়েভ ও পশ্চিমারা যেন শোনে, ডনবাস অঞ্চল (লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক নিয়ে গঠিত) চিরকালের জন্য রাশিয়ার হবে। আর রাশিয়া তার ভূখণ্ডকে যেকোনো মূল্যে রক্ষা করবে।
তিনি জানান, অধিকৃত অঞ্চলগুলোতে যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত শহর ও গ্রাম পুনর্র্নিমাণ করা হবে। সেখানকার অবকাঠামো, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন হবে।
শুধু সংযুক্তির ঘোষণা দিয়েই থেমে থাকেননি রুশ প্রেসিডেন্ট। যে কোনো উপায়ে অঞ্চলগুলো রক্ষা করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। বলেছেন, অঞ্চলগুলোর নিয়ন্ত্রণ কখনোই ছেড়ে দেবে না মস্কো।
মনে করা হচ্ছে ইউক্রেনের চার অঞ্চলকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে ঘোষণার পর এখন সেনাসদস্যদের সেখানকার ‘ফ্রন্টলাইনে’ পাঠানো যাবে। ফ্রন্টলাইন বলতে বোঝানো হয়েছে যে এলাকায় সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন দুই পক্ষের সেনারা। মস্কোর ভাষ্য, এই ফ্রন্টলাইন ১ হাজার কিলোমিটারের বেশি দীর্ঘ।
এ ছাড়া চারটি অঞ্চলকে যুক্ত করার পর সেগুলোকে রুশ ভূখণ্ড দাবি করার সুযোগ তৈরি হয়েছে পুতিনের। এখন সেখানে হামলা চালানোর জন্য ইউক্রেনীয়দের অব্যাহতভাবে অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে সহায়তা করলে পশ্চিমা দেশগুলোকে হুমকি দিতে পারবেন তিনি।
এই পুরো প্রক্রিয়া ২০১৪ সালের ক্রিমিয়া ঘটনার সঙ্গে মিলে যায়।
২০১৪ সালের মার্চেও একই পথে হেঁটেছিল রাশিয়া। সে বছর ইউক্রেনের ক্রিমিয়া অঞ্চল দখল করে নেয় মস্কো। পরে গণভোটের মধ্য দিয়ে ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করার ঘোষণা দেন পুতিন। তবে ক্রিমিয়া দখলে রক্ত ঝরেছিল খুবই কম। আর রাশিয়া পুরো অঞ্চলটিই দখল করতে পেরেছিল।
এবারের চিত্র ভিন্ন। দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের বড় অংশ ২০১৪ সাল থেকে মস্কোপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাতে ছিল। গত সাত মাসের যুদ্ধে দোনেৎস্কের ৬০ শতাংশ অঞ্চল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে এনেছে রুশ বাহিনী। কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ লিমান শহর অল্প কিছু সময়ের মধ্যেই রুশ বাহিনীর হাতছাড়া হতে পারে।
অপরদিকে জাপোরিঝঝিয়ার রাজধানী এখনো ভালোভাবেই ইউক্রেনীয়দের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যদিও রুশ ক্ষেপণাস্ত্রের আওতায় রয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করা আরেক অঞ্চল খেরসনের খুব কাছাকাছি রয়েছেন ইউক্রেনের সেনারা।
তবে পুরো পরিবর্তনটা এখনো স্পষ্ট নয়। ইউক্রেনের অঞ্চলগুলো নিজেদের বলে ঘোষণা দেওয়ার পর রাশিয়ার নতুন সীমান্ত কীভাবে নির্ধারণ করা হবে, তার সুস্পষ্ট ধারণা দিতে পারেননি ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভও। তিনি এটুকু বলেছেন, দোনেৎস্কের পুরোটাই রাশিয়ার। এ অঞ্চলের যেসব এলাকা এখনো দখলে নেই, সেগুলো ভবিষ্যতে ‘স্বাধীন’ করা হবে।
পুতিনের মনে কী চলছে, তা প্রকৃতপক্ষে কেউই জানে না। তবে সম্প্রতি সময়ে তাঁর পশ্চিমাবিরোধী মনোভাব নতুন স্তরে পৌঁছেছে। ফলে এটা স্পষ্ট যে, তিনি পশ্চিমা দেশগুলোকে এটাই বোঝাতে চাচ্ছেন যে, রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত করা চার অঞ্চলে ইউক্রেন হামলা চালালে, তা রাশিয়ার ওপরে হামলা বলেই ধরবে মস্কো।
এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে, রাশিয়ার এই মনোভাব ইউক্রেন যুদ্ধক্ষেত্র ও যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরে কতটা প্রভাব ফেলবে? এরই মধ্যে যে কোনো উপায়ে নিজেদের ভূখণ্ড রক্ষা করা হবে বলে হুমকি দিয়েছে পুতিন। তাঁর হুমকিতে বাদ পড়েনি পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়টিও। আর তাঁর প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু বলেছেন, ইউক্রেনের চেয়ে পশ্চিমাদের বিরুদ্ধেই বেশি লড়ছে মস্কো।
মনে করা হচ্ছে রাশিয়াকে থামানো যাবে না। ইতোমধ্যে অনেক তর্জন গর্জন করলেও পশ্চিমারা কিছুই করতে পারছে না। রাশিয়া এভাবেই এগুতে থাকবে বলে মনে হয়।
Leave a Reply