October 5, 2024, 8:19 am
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
একটি ১৮ কোটি টাকার দরপত্র প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহন থেকে প্রতিপক্ষকে সড়াতে সে পক্ষের তিনজনকে হত্যা করে দেহ থেকে মস্তক চ্ছিন্ন করে কুষ্টিয়া শহরের সড়ক ভবন ও গণপূর্ত ভবনের গেটে সেই মাথা ঝুলিয়ে রেখে ত্রাস সৃষ্টির মামলায় নিষিদ্ধ ঘোষিত গণবাহিনীর ১১ নেতা-ক্যাডারতে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছে কুষ্টিয়ার একটি আদালত।
মঙ্গলবার ঘোষিত এ রায়ে ৩ জনের আমৃত্যু ও ৮ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ডসহ অর্থদন্ডের আদেশ শোনানো হয়েছে। কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ অতিরিক্ত আদালত-১ এর বিচারক তাজুল ইসলাম জনাকীর্ণ আদালতে এই রায় দেন।
আমৃত্যুদন্ড হলেন- সদর উপজেলার পুলতাডাঙ্গা গ্রামে আসকর সরদারের ছেলে ফারুক সরদার, পশ্চিম আব্দালপুর গ্রামের ইছাহক আলী মাস্টারের ছেলে কালু ওরফে আলী রেজা এবং কুষ্টিয়া শহরের আড়–য়া পাড়া ২নং মসজিদ গলি এলাকার কালো মজনুর ছেলে রোহান।
যাবজ্জীবন সাজা প্রাপ্তরা হলেন- ভেড়ামারা বাহাদুরপুর গ্রামের বাসিন্দা মৃত খোরশেদ মন্ডলের ছেলে ফারুক মন্ডল, ঝিনাইদাহের ভায়না গ্রামের জাবেদ আলীর ছেলে আলতাফ মেম্বর, জলিল সেখের ছেলে লিয়াকত হোসনে, এছেম সেখের ছেলে মনোয়ার হোসেন, মৃত: আনছার সেখের ছেলে আকাউদ্দিন, করিমপুর গ্রামের বাসিন্দা মৃত ওয়াহেদ আলী জোয়ার্দারের ছেলে জহির উদ্দিন জোয়ার্দার, খোর্দ বাখইল গ্রামের বাসিন্দা আবু বক্কর মন্ডলের ছেলে নরুল এবং মাছপাড়া গ্রামের মৃত: উম্মাদ মন্ডলের ছেলে খাকচার মন্ডল।
এরা সবাই নিষিদ্ধ ঘোষিত গণবাহিনীর শীর্ষ নেতা ও ক্যাডার।
আদালতের মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালের ৯ আগষ্ট রাতে সন্ত্রসীরা কুষ্টিয়া সদর উপজেলার সোনাইডাঙ্গী গ্রামের মাঠের মধ্যে বংশীতলা মাঠে বংশীতলা গ্রামের শামসুল আলম জোহা (৪৫), ভবানীপুর গ্রামের আকবর আলীর ছেলে কাইয়ুম শাখাওয়াতী (৫৫) ও আয়ুব আলী নামের তিনজনকে পিচমোড়া বেঁধে জবাই করে দেহ হতে মস্তক বিচ্ছিন্ন করে ঘটনাস্থলে মস্তকবিহীন দেহ ফেলে রেখে প্রায় ১৬ কি:মি: দুরে কুষ্টিয়া শহরের সড়ক ভবন ও গণপূর্ত ভবনের গেটে তিন নিহতের মাথা ঝুলিয়ে রাখে।
ঐ সময় গণপূর্ত অধিদফতরে ১৮ কোটি টাকার একটি দরপত্র নিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থী দলগুলোর মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। হত্যাকান্ডের পর একটি চিরকুটের মাধ্যমে গণবাহিনী ঐ গত্যার দায়ও স্বীকার করে।
এ ঘটনায় নিহত শাসসুল আলম জোহার স্ত্রী মমতাজ খাতুন বাদি হয়ে ৯ জনের নামোল্লেখসহ আরও ৪/৫জন অজ্ঞাত এবং নিহত কাইয়ুম শাখাওয়াতীর ছোট ভাই আব্দুল হাই বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানায় দুটি হত্যা মামলা করেন।
মামলা দুটি তদন্ত শেষে ২০১০ সালের ২৭ অক্টোবর ১৮ কোটি টাকার টেন্ডার জিম্মি করণের উদ্দেশ্যে এই ট্রিপল হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে এমন অভিযোগ এনে মোট ২২জনের বিরুদ্ধেআদালতে চার্জশীট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ পুলিশ পরিদর্শক গোকুল চন্দ্র অধিকারী।
কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি এ্যাড. অনুপ কুমার নন্দী জানান, পুলিশের দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনে বিজ্ঞ আদালত দীর্ঘ স্বাক্ষ্য শুনানী শেষে ১১আসামীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীত ভাবে প্রমানিত হওয়ায় এদের মধ্যে অপরাধের ভিন্নতা ও মাত্রা ভেদে বিভিন্ন দন্ডাদেশ দিয়েছেন বিজ্ঞ আদালত।
এই রায় ঘোষনার সময় বিজ্ঞ আদালতের পর্যবেক্ষনেও বলা হয়েছে, আসামীরা ‘জাসদ গণবাহিনীর নেতাকর্মী, আন্ত:জেলা অপহরণ, খুন, চাদাবাজীসহ বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত সংঘবদ্ধ চক্র ও অভ্যাসগত অপরাধী বিবেচনায় তারা হত্যাকান্ডের পর দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে নৃশংসভাবে কঠিন পন্থা অবলম্বন করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির কারণ ঘটিয়েছিলো’।
রায় ঘোষনাকালে দন্ডপ্রাপ্ত আসামীরা সবাই পলাতক থাকা প্রসঙ্গে পিপি বলেন, দন্ডপ্রাপ্ত আসামীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন আসামী আইন শৃংখলা বাহিনীর সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়েছে এবং কেউ কেউ এখনও বেঁচে থাকলেও পলাতক রয়েছেন। এদের বিষয়ে ততক্ষনাৎ বিস্তারিত জানা যায়নি।
Leave a Reply