May 28, 2023, 12:05 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
কুষ্টিয়ায় ব্যক্তিগত আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই নেতার দ্ব›েদ্বর জেরে তাদের অনুসারীদের মধ্যে সৃষ্ট সংঘর্ষে ৪ জন নিহতের ঘটনায় দুটি পৃথক মামলা হয়েছে।
সোমবার ঐ ঘটনা ঘটার পর মঙ্গলবার রাতে দুই পক্ষ ইসলামী বিশ^বিদ্যালয় থানায় পৃথক দুটি মামলার দরখাস্ত করে। পুলিশ মামলা দুটি গ্রহন করে নথিভুক্ত করে বুধবার রাতে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহত মতিয়ার মন্ডলের ভাই আশরাফুল বাদী হয়ে ঝাউদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও একই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কেরামত উল্লাহকে প্রধান আসামি করে ৬৭ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন। অপরদিকে সংঘর্ষে নিহত রহিম মালিথার ছেলে রফিকুল বাদী হয়ে প্রতিপক্ষ আনিস মেম্বরকে প্রধান আসামি করে ২৭ জনের বিরুদ্ধে একই থানায় আরেকটি হত্যা মামলা করেছেন।
দুটি মামলার বাদী ও সকল আসামীই স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী বলে জানা গেছে।
এদিকে ঘটনার তিনদিন অতিবাহিত হলেও পুলিশ এখনও ঘটনায় জড়িত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
ইতোমধ্যে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে নিহতদের মরদেহ হস্তান্তর করে পুলিশ। নিহতরা হলেন- আস্তানগর গ্রামের দাউদ মন্ডলের ছেলে লাল্টু (৪০), মৃত হাসেম আলীর ছেলে কাশেম (৫০), মৃত আবুল আলীর ছেলে রহিম (৫৫) ও আজিজের ছেলে মতিয়ার (৪৫)। তারা সবাই স্থানীয় আওামী লীগের কর্মী এবং বিভিন্ন পক্ষে বিভক্ত।
এদের মধ্যে নিহত মতিয়ার, লাল্টু ও কাশেম বর্তমান ঝাউদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা মেহেদী হাসানের সমর্থক এবং আব্দুর রহিম মালিথা প্রতিপক্ষ সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কেরামত আলীর সমর্থক।
বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি শান্ত। পুরো আস্থানগর গ্রাম পুরুষশূন্য রয়েছে। এলাকায় পুলিশ মোতয়েন রয়েছে।
সোমবার সন্ধ্যায় সংঘটতি সংঘর্ষটি ছিল এলাকায় র্দীঘ সময় ধরে চলে আসা কয়েক ব্যক্তির আধিপত্য বিস্তার প্রচেষ্টার ফল। এরা হলেন ঝাউদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ঝাউদিয়া ইউনিয়ন ইউনিট আওয়ামী লীগের সভাপতি কেরামত আলী, একই ইউনিট আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সদস্য ও ঝাউদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য ফজলুল হক, আব্দুল মজিদ ও মেহেদী।
এবারের ঘটনার সূত্রপাত হিসেবে জানা যায় ঐ গ্রামের জনৈক রহিমের সাথে জমি সংক্রান্ত দ্ব›দ্ব চলছিল রশিদুল নামের এক ব্যক্তির। রশিদুল ফজলুর রহমানের লোক আর রহিম ছিল কেরামতের। রহিম উজানগ্রাম বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে বটতলা নামক স্থানে রাশিদুলের সাথে তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়ে। সেখানে বেলা সাড়ে ৫টার দিকে রশিদুলের সাথে থাকা আনিস, মতিয়ার, সাবু সহ কয়েকজন মিলে রহিমকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে।
এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর সন্ধ্যার ইফতারের পর কেরামতের লোকজন রহিম হত্যায় জড়িত মতিয়ারের বাড়িতে হামলা চালায়। এতে নিহত হন তিনজন। এরা হলেন মতিয়ার (৪০), লাল্টু (৩০) ও কাশেম (৫০)।
এরপর সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়লে উভয় পক্ষের আরো ১৫ থেকে ২০ জন আহত হন।
পুলিশের তথ্য মতে এই লোকগুলোর সৃষ্ট পক্ষ-বিপক্ষের মধ্যে প্রায়ই সংঘর্ষ ঘটলেও বড় একটি সংঘর্ষ ঘটেছিল ২০১৬ সালের ২৪ সে্েপ্টম্বর। এই সংর্ঘষ ছিল কেরামত ও মেহেদীর মধ্যে। এতে তিনজন নিহত হন। নিহতরা সবাই কেরামত পক্ষের লোক। নিহতরা ছিলেন শাহাজ উদ্দীন (৫৯) ইমন আলী (৩৪) ও আকালি (৫৫)। এ হত্যাকান্ড’র ঘটনায় নিহতের স্বজনরা মামলা করে। পরে ৩১ অক্টোবর ২০১৬ মামলার এজাহার নামীয় আসামী আব্দুল মজিদ ও মেহেদীকে কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার আলাউদ্দিন নগর এলাকা থেকে ২টি বিদেশী পিস্তল, ২টি পিস্তলের ম্যাগাজিন, ৫ রাউন্ড পিস্তলের গুলি ও ১০ গ্রাম হিরোইন সহ গ্রেফতার করে। পরে তারা জামিনে ছাড়া পান। মামলা চলমান।
পুলিশ সুপার খায়রুল আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান দোষীদের চিন্থিত করা হয়েছে। এরা সবাই গা ঢাকা দিয়েছে। তবে যেখানেই পালিয়ে থাক তারা গ্রেফতার হবে।
Leave a Reply