November 12, 2024, 5:48 am
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
দুই বছর আগে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনায় তিন হাজার টাকা ক্ষতির বদলা নিতে অপহরণ করে হত্যঅ করা হয়েছে চুয়াডাঙার তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী আবৃু হুরায়রাকে।
হত্যাকারীকে গ্রেফতারের পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্য এসেছে বলে জানাচ্ছে চুয়াডাঙা পুলিশ সোমবার বিকেলে এক প্রেস ব্রিফিং-এ তথ্য জানান চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু তারেক।
তিনি বলেন প্রথমে শিশুটিকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় একটি কবরস্থানে। সেখানে তাকে শ^াসরোধ করে হত্যা করা হয়। পরে সাজানো হয় অপহরণ নাটক।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু তারেক বলেন ২ বছর আগে এক ঈদের রাতে উচ্চ শব্দে সাউন্ড বক্স বাজাচ্ছিলেন মোমিন ও তার বন্ধুরা। এতে চরম বিরক্ত হন আশেপাশের বাড়ির লোকজন। এগিয়ে যান আবু হুরুায়রার বাবা আব্দুল বারেক। তারা নিষেধ না শুনলে তিনি সেই সাউন্ড বক্সের টেবিলে লাথি মারেন। এতে সাউন্ড বক্সটির ক্ষতি হয়। গানও বন্ধ হয়ে যায়। এতে মোমিনের তিন হাজার টাকা ক্ষতি হয়।
এই ঘটনায় মনে মনে ক্ষিপ্ত মোমিন প্রতিশোধ নিতে সুযোগ খুঁজতে থাকে। সে টার্গেট করে আব্দুল বারেকের ছেলে আবু হুরায়রাকে।
১৯ জানুয়ারি বিকালে আবু হুরায়রা নিজ বাড়ি থেকে একই গ্রামের গ্রাম্য প্রাইভেট টিউটর রাজিব হক রঞ্জুর কাছে পড়তে যায়। মোমিন তাকে একা পেয়ে খরগোশ দেয়ার লোভ দেখিয়ে তালতলা সরকারি কবরস্থানে নিয়ে যায় তিনি। সেখানে মোমিন হুরায়ার হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। হত্যার পর প্রথমে মরদেহ রেখে চলে যায় মোমিন। পরে রাত ৮ টার দিকে আবারও কবরস্থানে গিয়ে একটি কবরের মধ্যে পুঁতে রাখে।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহাসিন জানান ছেলের নিখোঁজের বিষয়ে ঐ দিনই হুরায়রার বাবা বারেক চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেন। এরপর ২৬ জানুয়ারি হুরায়রার বাবা একটি চিরকুট পান। সেখানে হুরায়ায়াকে অপহরণ করা হয়েছে জানানো হয় এবং ১০ লাখ টাকা মুক্তিপন দাবি করা হয়। এ ঘটনায় বারেক ঐদিনই বাদী হয়ে ৫ জনের নাম উল্লেখ করে সদর থানায় অপহরণ মামলা দায়ের করেন। তাদের মধ্যে প্রাইভেট শিক্ষক রনজুসহ পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ রনজু হক ও মনজু হককে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু তাদের কাছ থেকে পুলিশ কোন তথ্য পায় না।
এরপর চক্রটি ২৯ জানুয়ারি আরো একটি চিরকুট দিয়ে ১০ লাখ টাকা দাবি করে। ১ ফেব্রæয়ারি এসএমএস দিয়ে পুনরায় চাঁদা দাবি করে। পরের দিন স্কুলছাত্রের পরিবার মুক্তিপণ বাবদ ৫ লাখ টাকা দিতে চাইলে তারা ১০ লাখ টাকা দাবি করে।
এরপর ৪ ফেব্রæয়ারি মুক্তিপণের জন্য ৬ লাখ টাকা দাবি করে অপহরণকারীরা। চিরকুট ও মোবাইল ফোন নম্বর স্কুলছাত্রের পরিবার পুলিশকে দেয়।
ওসি বলেন, রোববার রাতে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ তালতলা গ্রামের গোরস্তানপাড়া থেকে শহিদুল ইসলামের ছেলে মোমিনকে আটক করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে আবু হুরায়রাকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর মরদেহ গ্রামের গোরস্তানের একটি পুরাতন কবর খুঁড়ে গুম করার কথা স্বীকার করে।
এদিকে হুরায়রার হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। সোমবার দুপুরে বিদ্যালয়ের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবি জানানো হয়।
ফোনে কথা হলে হুরায়রার বাবা বারেক তার সন্তান হত্যার বিচার চেয়েছেন। তিনি বলেন এ পৃথিবীতে ঐ ছোট ঘটনায় যারা এই নিষ্ঠুর পথ বেছে নেয় তাদের মৃত্যু কামনা করা ছাড়া কিছুই করার নেই।
তালতলা গ্রামের গোরস্থান পাড়ার আব্দুল বারেকের ছেলে আবু হুরায়রা (১১) চুয়াডাঙ্গা ভি জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণির ছাত্র ছিল। ৬ বোনের একমাত্র ছোট ভাই ছিল আবু হুরায়রা।
Leave a Reply