February 11, 2025, 10:03 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
বরেণ্য বাংলাদেশী শিক্ষাবিদ, লেখক ও অধ্যাপক প্রফেসর ড. মু. কায়েস উদ্দিন ইন্তেকাল করেছেন। আজ বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) বেলা ১২টার দিকে তাঁর রাজশাহী শহরস্থ নিজ বাসভবনে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছির ৮৫ বছর। আপাদমস্তক প্রগতিশীল ও সম্পুর্ণ অসাম্প্রদায়িক চিন্তা ও ধ্যান ধারনার অধিকারী প্রফেসর কায়েস উদ্দিনের মৃত্যুতে বিভিন্ন মহলে শোকের ছায়া নেমে আসে। দেশের আনাচে-কানাচে অবস্থানরত তাঁর শিক্ষার্থী ও শুভাকাঙ্খীরা শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েন।
তাঁর মৃত্যুতে ইতোমধ্যে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তিনি এই বিশ^বিদ্যালয়ে ৫ম উপাচার্য ছিলেন। এখানে তিনি অসংখ্য গুণগ্রাহী ও শুভাকাঙ্খী রেখে গেছেন। কুষ্টিয়া শহরের অসংখ্য মানুষ এই মহৎপ্রাণ মানুষটির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ে উপচার্যের দায়িত্ব পালনকালীন এ জেলার মানুষের সাথে তাঁর নিবিড় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। কুষ্টিয়া জেলা বঙ্গবন্ধু পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মতিউর রহমান লাল্টু, সাধারণ সম্পাদক শামসুর রহমান বাবু ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. আমানুর আমান এক শোক বার্তায় মরহুমের আত্মার শান্তি কামনা করে শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। শোকবার্তায় তিনি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাঁর শোক-সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানান। পৃথক-পৃথক শোক-বার্তায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান ও ট্রেজারার অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া শোক জানিয়েছেন। তাঁরা মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাঁর শোক-সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানান।
এছাড়াও, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মু. আতাউর রহমান শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন।
কর্মজীবনে প্রফেসর ড. মু. কায়েস উদ্দিন এক বর্নাঢ্য অতীত রেখে গেছেন। সমগ্র জীবন জুড়েই প্রতিটি মুহুর্ত তিনি কাজ করে গেছেন। অসংখ্য সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন। রাজনৈতিক আদর্শে তিনি ছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আদর্শে বলীয়ান একজন মানুষ।
প্রফেসর ড. মু. কায়েস উদ্দিনই তাঁর পালকে জড়ো করেছেন পর পর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের উপাচার্য হবার গৌরব। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯৭ সালে ৫ম উপাচার্য হিসাবে যোগদান করে মেয়াদ শেষের আগেই তিনি যোগদান করেছিলেন বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়েরর উপাচার্য হিসাবে। মুল কর্মজীবনে প্রফেসর ড. মু. কায়েস উদ্দিন ছিলেনন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন বিভাগের শিক্ষক।
প্রফেসর ড.মুহাম্মদ কায়েস উদ্দিন ১৯৩৭ সালের ১৫ জুলাই চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুরের আলীনগর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
ছাত্র জীবন থেকেই তুখোড় মেধার অধিকারী প্রফেসর কায়েস ১৯৫৭ সালে রাজশাহী বিশ্বদ্যিালয় থেকে বি.এস.সি পরীক্ষায় ডিস্টিংশনসহ প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করেন। এই ফলাফলের কারনে রাজশাহী বিশ্বদ্যিালয় কর্তৃপক্ষ প্রফেসর কায়েস উদ্দিনকে স্বর্ণপদক প্রদান করে। এরপর ১৯৬১ সালে কমনওয়েল্থ স্কলারশীপ নিয়ে যুক্তরাজ্যের গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। ১৯৭৪ সালে ইম্পেরিয়াাল কলেজ অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলোজিতে পোস্ট-ডক্টরেল গবেষণার জন্য কমনওল্থে একাডেমিক স্টাফ ফেলোশিফ লাভ করেন।
কর্ম জীবনে রাজশাহী বিশ্বদ্যিালয়ে ও এর বাইরে পুরো জীবনে তিনি অসংখ্য কাজের মাঝে তিনি নিজেকে ডুবিয়ে রেখেছিলেন। তিনি রাজশাহী বিশ্বদ্যিালয়ে প্রাণ রসায়ণ বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি, ছিলেন বিজ্ঞানের অনুষদের ডীন, সিন্ডিকেট সদস্য, সিনেট সদস্য, পরিকল্পনা উন্নয়ন কমিটির সদস্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি, রাজশাহী চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালযের (বর্তমানে ফাইন আর্টস বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়) এর গভরর্ণিং বডির সদস্য, রাজশাহী বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাংগঠনিক কমিটির সদস্য, রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের সদস্য এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য, বাংলাদেশ মেডিক্যাাল রিসার্চ কাউন্সিলের সদস্য।
পরবর্তীতে এসে তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য এবং পরবর্তীতে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে সাফল্যের সাথে দায়িত্ব পালন করেন।
বাংলাদেশ প্রাণ রসায়ন সমিতির সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযের সিনেট সদস্য, বঙ্গবন্ধু পরিষদের রাজশাহী জেলা শাখার সহ-সভাপতিসহ বিভিন্ন সমাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের সাথে তিনি জড়িত ছিলেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সফল উপাচার্য।
প্রফেসর কায়েস ২০০০ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ১২টি নতুন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকল্পে কারিকুলাম, খসড়া আইন প্রণয়ন এবং এতদসংক্রান্ত অন্যান্য কার্যাদি সম্পাদনের লক্ষ্যে গঠিত কমিটির আহবায়ক ছিলেন। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স তিন বছরের স্থলে চার বছরকরণ সংক্রান্ত তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রæতি বান্তবায়নের লক্ষ্যে, সরকার কর্তক গঠিত কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন প্রফেসর কায়েস উদ্দিন।
১৯৯৬ সালে ইউনেস্কোর আনুকুল্যে তিনি চীনের গুয়াংঝুাক্যান্টন শহরে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সিম্পোজিয়ামে অংশগ্রহণ। ১৯৯৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর র্জানির হাইডেল বার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউট বঙ্গবন্ধু চেয়ার স্থাপন উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে তিনি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণার জন্য তিনি সিঙ্গাপুর, নিউজিল্যা-, যুক্তরাজ্য, জার্মানী, চীন, ভারত ও হংকং ভ্রমন করেন। দেশী-বিদেশী বিজ্ঞান সাময়িকীতে তাঁর শ’য়ের কাছাকাছি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
প্রফেসর কায়েস উদ্দিন বাংলাদেশ বিজ্ঞান উন্নয়ন সমিতি (বি.এ.এস) আয়োজিত নবম (১৯৮৪) ও দশম (১৯৮৫) জাতীয় বিজ্ঞান সম্মেলনে প্রাণ রসায়ণ, ফামের্সী, চিকিৎসা, পুষ্টি ও পশু চিকিৎিসা শাখার সভাপতি মনোনিত হন। বাংলাদেশ জার্নালিষ্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাবর্ষিকী ২০০১ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শিক্ষা বিস্তারে বিশেষ অবদানের জন্য তাঁকে ‘বিজে অ্যাওয়াডর্’ ও সম্মনানা প্রদান করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ণ বিভাগের ৪০ বছর পূর্তি উৎসবে পরিষদ বাংলাদেশে প্রাণ রসায়ণ শিক্ষা বিস্তারে তাঁর অবদানের জন্য তাঁকে সম্মাননা প্রদান করে।
Leave a Reply