December 12, 2024, 3:53 am
ড. আমানুর আমান, সম্পদক ও প্রকাশক দৈনিক কুষ্টিয়া, দ্য কুষ্টিয়া টাইমস/
আজ দেশ জুড়ে তিনটি ধর্মীয় উৎসব চলছে। দেশের বৃহত্তম জনগোষ্ঠী মুসলমানদের প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ (সঃ)’র জন্ম ও মৃত্যুর দিন আজ ১২ রবিউল আউয়াল। মুহম্মদ (স:) সৌদি আরবের মক্কায় ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের এদিনে জন্মগ্রহণ করেন এবং ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দের একই দিনে মৃত্যুবরণ করেন। প্রিয় নবীর জন্ম ও মৃত্যুর এ দিনটিকে ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা অত্যন্ত ভাব-গাম্ভীর্যের সঙ্গে পালন করে থাকে। বাংলাদেশে দিনটি পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) হিসেবে পরিচিত
অন্যদিকে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় জনগোষ্ঠী হিন্দুদের পবিত্র লক্ষী পুজা। ঐশ্বর্য, উন্নতি (আধ্যাত্মিক ও পার্থিব), আলো, জ্ঞান, সৌভাগ্য, দানশীলতা, সাহস, সৌন্দর্যের দেবী লক্ষ্মী। শারদীয় দুর্গোৎসব শেষ হওয়ার পরবর্তী পূর্ণিমা তিথিতে হিন্দু সম্প্রদায় লক্ষ্মীপূজা উদযাপন করে থাকে।
ওদিকে একই সাথে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা আজ। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা আজ। এ পুণ্যময় পূর্ণিমা তিথিতে মহামানব তথাগত গৌতম বুদ্ধ তাবতিংস স্বর্গে মাতৃদেবীকে অভিধর্ম দেশনার পর ভারতের সাংকাশ্য নগরে অবতরণ করেন।
এ তিনটি উৎসবই দেশজুড়ে সাড়ম্বরে পালিত হচ্ছে। তিন সম্প্রদায়ের মানুষই গভীর শ্রদ্ধা, ভালবাসা ও ধর্মীয় গাম্ভীর্য নিয়ে পালন করছে স্ব স্ব ধর্মীয় আচারাদি।
এ উপলক্ষে আলাদা বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণীর মূলসুর একই। তাঁরা দেশের সুখ ও সমৃদ্ধি কামনা করেছেন। সকল মতও পথের সমন্বয়েই এই লক্ষ্য অর্জিত হবে।
‘বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে সকল ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষের নিজ নিজ ধর্ম পালনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছিলেন। তার ধারাবাহিকতায় বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’ এ আপ্তবাক্য ধারণ করে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষ যার যার ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করে যাচ্ছেন।
আমরা বলতে চাই আবহমানকাল থেকেই বাংলা ভূখন্ডে নানা জাতি-গোষ্ঠী ও ধর্ম মতের অনুসারীরা একত্রে বসবাস করে আসছে। সম্প্রদায়গুলোর এই আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতির ঐতিহ্যই বাংলাদেশের ঐতিহ্য এবং এভাবেই বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ।
প্রতিটি ধর্মেই ভিন্ন ধর্মাবলম্বীকে সম্মান করার আদেশ বিদ্যমান। একই সাথে প্রত্যেক ব্যক্তির ধর্মীয় স্বাধীনতা আছে। ধর্মপালন কিংবা বর্জন ব্যক্তির নিজস্ব অধিকার। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন-‘তুমি বল, তোমার প্রতিপালক প্রভুর পক্ষ থেকে পূর্ণ সত্য প্রেরিত, অতএব যার ইচ্ছা সে ইমান আনুক, আর যার ইচ্ছা সে অস্বীকার করুক’ (সূরা কাহাফ : ৩০)। অথচ অবস্থা ভিন্ন। বিপরীত। মানুষের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ, মারামারি, হানাহানি এবং যুদ্ধবিগ্রহ, এক জাতিগোষ্ঠী অপর জাতির ওপর আক্রমণ, সংখ্যাগুরর সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার।এর মধ্যে বেশীরভাগ জুড়েই রয়েছে ধর্ম।
দেশেও আমরা সম্প্রতিক কালে একটি বিশেষ গোষ্ঠীর ইশারাই দেশের হাজার বছরের এই সম্প্রীতি নষ্টের পাঁয়তারা চলছে। ধর্মীয় উন্মাদনায় সৃষ্টি করে সন্ত্রাসী কার্যকলাপের মাধ্যমে মসজিদ, মন্দির, গির্জা বা অন্য কোনো স্থাপনা ভাঙা ও জ্বালিয়ে দেওয়া এবং নিরীহ মানুষের ওপর আক্রমণ করা বা হত্যা করার মতো ঘটনা ঘটছে।
এটা হতে দেয়া যাবে না। এই দেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাঁধনে আবদ্ধ। সন্ত্রাস ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, নাশকতায় লিপ্ত এমন কোন অপশক্তির স্থান নেই এখানে।
মহানবী (সা.) বিদায় হজের ভাষণে সবাইকে সতর্ক করে বলেছিলেন, ‘হে মানবমণ্ডলী! সাবধান, তোমরা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না। কেন না তোমাদের পূর্বের জাতিগুলো ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করার কারণেই ধ্বংস হয়ে গেছে’ (ইবনে মাজা)।
তাই দেশে যারা ধর্মকে উপজীব্য করে যারা এই সম্প্রীতির পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করবে তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তা প্রতিহত করতে হবে। ধর্ম-বর্ণ-গোষ্ঠী সবার মাঝে শান্তি, সৌহার্দ ও আস্থার বন্ধন যুগ যুগ অটুট থাকবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
Leave a Reply