February 8, 2025, 6:13 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেক জালিয়াতি করে আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় আজ রোববার সকালে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ দায়ের করেছেন বোর্ডের সচিব এএমএইচ আলী আর রেজা।
বোর্ডের সচিব এএমএইচ আলী আর রেজা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘গত ২ দিন সরকারি ছুটি থাকায় আজ আমরা দুদকে একটি অভিযোগ জানিয়েছি। দুদক কর্মকর্তারা সেটি গ্রহণ করে তদন্ত কাজ শুরু করেছেন।’
জেলা দুর্নীতি দমন কমিশনের উপপরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাত জানান, যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেক জালিয়াতি করে আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন বোর্ডের সচিব। আমরা অভিযোগ পাওয়ার পরপরই তদন্ত কাজ শুরু করেছি। বোর্ড থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করেছি।
বোর্ড সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে আয়কর ও ভ্যাট বাবদ ১০ হাজার ৩৬ টাকার ৯টি চেক ইস্যু করে শিক্ষা বোর্ড। ইস্যুকৃত ৯টি চেক জালিয়াতি করে একটি প্রতিষ্ঠানের নামে ১ কোটি ৮৯ লাখ ১২ হাজার ১০টাকা এবং আরেকটি প্রতিষ্ঠানের নামে নামে ৬১ লাখ ৩২ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়।
যশোর শিক্ষা বোর্ড এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান দাবি করেছেন, ‘গত বৃহস্পতিবার দুর্নীতির বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর থেকে নিখোঁজ আছেন সহকারী হিসাব রক্ষক। আজ রবিবারও তিনি অফিসে আসেননি। তার কক্ষটি তালাবদ্ধ অবস্থায় আছে।’
যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোল্লা আমীর হোসেন বলেন, ‘অর্থআত্মসাতের সঙ্গে জড়িত ২ প্রতিষ্ঠান টাকা ফেরত দিতে চেয়েছেন। অভিযুক্তরা টাকা ফেরত দিতে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। টাকা ফেরত দিলেও আইনি প্রক্রিয়ায় আদালতের মাধ্যমেই বিষয়টি নিষ্পত্তি হবে।’
ঘটনার পেছন/
চেক জালিয়াতি করে যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের আড়াই কোটি টাকা লোপাটের ঘটনায় জড়িত অভিযোগে আলোচনায় আসছে ছয়জনের নাম। এর মধ্যে রয়েছেন বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর মোল্লা আমীর হোসেনসহ চার কর্মকর্তা এবং যে দুই ব্যবসায়ীর অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে তাদের নাম।
এদিকে, টাকা লোপাটের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তদন্তের প্রস্তুতি নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যশোর সমন্বিত কার্যালয়।
শিক্ষাবোর্ড সূত্র জানায়, সরকারের ভ্যাট বাবদ শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ ১০ হাজার ৩৬ টাকার চেক ইস্যু করে। কিন্তু সেই চেকের বিপরীতে প্রতারক চক্র আড়াই কোটি টাকা ৯টি চেকের মাধ্যমে তুলে নেয়। বিষয়টি ৭ অক্টোবর বোর্ডের হিসাব শাখা থেকে ধরা পড়ে।
বোর্ডের দুই কোটি ৫০ লাখ ৪৪ হাজার ১০ টাকা উত্তোলন হয়েছে যশোরের ভেনাস প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের মালিক শরিফুল ইসলাম বাবু ও শাহী লাল স্টোরের মালিক আশরাফুলের অ্যাকাউন্ট থেকে।
এ ঘটনায় কোতোয়ালি মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছে বোর্ড কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে ঘটনা তদন্তে কলেজ পরিদর্শক কে এম রব্বানিকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
যশোর শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান মোল্লা আমীর হোসেনের সঙ্গে উপ-সহকারী প্রকৌশলী কামাল হোসেন, প্রশাসন শাখার ভারপ্রাপ্ত সেকশন অফিসার রাকিব হাসান ও হিসাব সহকারী আবদুস সালাম এ টাকা উত্তোলনে জড়িত বলেও আলোচনা চলছে।
ভেনার্স প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের মালিক শরিফুল ইসলাম বাবু দাবি করেন, টাকা উত্তোলনে চেয়ারম্যান মোল্লা আমীর হোসেন, উপ-সহকারী প্রকৌশলী কামাল হোসেনসহ চারজন জড়িত।
তিনি জানান, ভুয়া প্যাড, সিল ব্যবহার করে প্রকৌশলী কামাল হোসেন ও চেয়ারম্যান এ কাজে সরাসরি জড়িত। টাকা সব তাদের কাছে। আমার কাছ থেকে ফিরতি চেকে তারা এ টাকা নিয়েছে।
যশোর শিক্ষাবোর্ডের অডিট কর্মকর্তা আবদুস সালাম বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরের বিভিন্ন মালামাল ক্রয় বাবদ সরকারের ভ্যাটের ১০ হাজার ৩৬ টাকার ৯টি চেক ইস্যু করা হয়। কিন্তু পরে দেখা যায় যশোরের ভেনার্স প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের নামে সাতটি ও শাহীলাল স্টোরের নামে দুটি চেকের মাধ্যমে বোর্ডের দুই কোটি ৫০ লাখ ৪৪ হাজার ১০ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।
শিক্ষাবোর্ডের সচিব এ এম এইচ আলী আর রেজা বলেন, ভেনার্স প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং ও শাহীলাল স্টোর ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক যশোর শাখা থেকে এ টাকা তুলেছে। বোর্ডের চেকে আমার সইয়ের সঙ্গে চেয়ারম্যানের সই থাকে। তিনি দেখে-বুঝে স্বাক্ষর করেন।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক যশোর শাখার ব্যবস্থাপক রিয়াজ হাসান বলেন, ভেনার্স প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং যে চেক দিয়েছে তা শিক্ষাবোর্ডের। ক্লিয়ারিংয়ের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।
Leave a Reply