February 7, 2025, 12:27 am
শাহনাজ আমান/
অদৃশ্যমান ক্ষতির অনুষঙ্গে করোনা অব্যাহতভাবে যে ক্ষতি করে চলেছে সেটা বিশ্বজুড়ে মানসিক স্বাস্থ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে উদ্বেগের বিষয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভীতি, লকডাউন ও ঘরবন্দি জীবনের কারণে মানুষের মানসিক ঝুঁকি বেড়েছে অনেক। সতর্কবার্তা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংস্থাটি বলছে, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ভুগছেন এমন মানুষরা যদি সর্বোচ্চ চিকিৎসাও পান, তারপরও তাদের লক্ষণ থেকে যাবে। ‘মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মহামারির প্রভাব মারাত্মক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন থাকা, সংক্রমণভীতি, পরিবারের সদস্য হারানোর দুঃখ এসবের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জীবিকা হারানোর ভয়।’
এরই মধ্যে আজ (১০ অক্টোবর) বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক মেডিক্যাল জার্নাল ল্যানসেটের সম্পাদক ড. রিচার্ড হর্টন এক নিবন্ধে লিখেছেন, ‘কোভিড-১৯ বৈশ্বিক অতিমারি বা প্যানডেমিক নয়, বরং এটি সিনডেমিক। কমপক্ষে দুই ধরনের রোগ বা সমস্যা যদি মহামারি হিসেবে আবির্ভূত হয়ে বিপুল সংখ্যক মানুষের শারীরিক, মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে— তাকে সিনডেমিক বলা যায়। মহামারির কারণে আর্থ-সামাজিক বড় ধরনের পরিবর্তনও সিনডেমিক হতে পারে।’
এদিকে, দেশে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) জানিয়েছে, করোনা সংক্রমণ ভীষণভাবে মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলেছে।
আইইডিসিআর জানিয়েছে, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের জরিপ অনুযায়ী ২০১৮ সালে দেশে মানসিক রোগের হার ছিল ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। করোনাকালে ৪৬ শতাংশ মানুষের মধ্যে বিষণ্নতা ও ৩৩ শতাংশের মধ্যে দুশ্চিন্তার লক্ষণ পাওয়া গেছে। অথচ দুই বছর আগে একই প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় দেখা গিয়েছিল— প্রাপ্তবয়স্কদের মানসিক রোগের হার ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। যার মধ্যে বিষণ্ণতার হার ছিল ছয় দশমিক সাত শতাংশ ও দুশ্চিন্তা ছিল চার দশমিক সাত শতাংশ।
আগের যে কোনও সময়ের চেয়ে করোনাকালে আত্মহত্যা বেড়েছে জানিয়ে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, গত এক বছরে দেশে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে প্রায় ১৪ হাজার। করোনা নিয়ে কুসংস্কার ও কোভিড ভীতিতে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে পাঁচটি। এ ছাড়া করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যেও মানসিক চাপ বেড়েছে।
চীনের উহান, ইতালি এবং নিউইয়র্কে গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষের মধ্যে পিটিএসডি হওয়ার আশঙ্কা আছে।
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, জীবনে প্রতিটি মানুষই কোনও না কোনও সময় হতাশা, বিষণ্নতা বা মন খারাপের মধ্যে দিয়ে যায়। কিন্তু করোনার আগে এসব বিষয় নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার উদাহরণ ছিল না। করোনায় এ বিষয়টি বদলে গেছে। মানুষ এত বেশি ডিপ্রেশনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে যে তাকে চিকিৎসকের কাছেও যেতে হচ্ছে।
এই প্রভাব শিশু কিশোরদের মধ্যে বেশী হয়েছে। যাদের বয়স ৬ থেকে ১২ এই বয়সীরা সব থেকে বেশী সময় ঘরবন্দী থেকেছে। এদের অনেকেই এক ধরনের মানসিক সিনড্রোমে ভুগছে।
Leave a Reply