February 10, 2025, 11:12 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাচ্ছে করোনা ডেডিকেটেড ২৫০ শয্যার কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা। এক-দেড় ঘন্টার ব্যবধান নিয়ে ঘটে চলেছে একেকটি মৃত্যু। একই সাথে মৃত্যুর খুব কাছে গিয়ে ছটফট করছেন অসংখ্য করোনা আক্রান্ত মানুষ। চিকিৎসকরা বলছেন এটি একটি নিরুপায় পরিস্থিতি। তাদের নিয়ন্ত্রনের বাইরে।
এ প্রতিবেদক বুধবার সকালে ঐ হাসপাতালে যান। প্রায় আধাঘন্টা তিনি পর্যবেক্ষণ করেন হাসপতালের পুরো পরিস্থিতি। কথা বলেন হাসপাতাল কতৃপক্ষের সাথে।
হাসপাতাল সূত্র মতে সেখানে গত ২৪ ঘন্টায় ১৩ জন করোনা আক্রান্ত মারা গেছেন। এছাড়া, উপসর্গ নিয়ে মারা গেনে আরো ৬ জন।
হাসপাতাল সূত্র বলছে, বুধবার সকাল পর্যন্ত সেখানে ২৫২ জন করোনা আক্রান্ত রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এত বিশাল সংখ্যক রোগীকে চিকিৎসা দেয়ার মতো সামর্থ্য হাসপাতালের নেই বলে জানান হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার তাপস কুমার সরকার।
তিনি জানান অসংখ্য রোগীকে তারা সার্পোট দিতে পারছেন না। রোগীদের যে ধরনের চিকিৎসা দরকার তার ব্যবস্থা এখানে নেই। তার দেয়া হিসেব মতে ২৫২ রোগীর মধ্যে অধিকাংশেরই অক্্িরজেন প্রয়োজন হচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় শতাধিক আক্রান্তের অক্্িরজেন স্যাচুরেশন ৪৫ থেকে ৭০ ভাগ।
তিনি জানান হাসপাতালে একটি সি-প্যাপ, একটি বি-প্যাপ, চারটি আইসিইউ ও চব্বিশটি এইচডিইউ বেড আছে। এই ২৪টি শয্যায় মূলত জটিল রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয় যেখানে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলাসহ অন্যান্য আধুনিক উপকরণ ব্যবহার করা হয়। বাইরে অন্য রোগীদের সাধারণ বেডে হয় সেন্ট্রাল অক্সিজেন সেবা অথবা সিলিন্ডারে অক্সিজেন দিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ আছে ৬৪টি বেডে। উচ্চমাত্রার (হাই ফ্লো) অক্সিজেন দেওয়া সম্ভব ২২ জনকে।
“যাদের স্যাচুরেশন ৪৫ থেকে ৭০ ভাগ এমন সবাইকেই উচ্চমাত্রার (হাই ফ্লো) অক্সিজেন দেওয়া দরকার কিন্তু সম্ভব হচ্ছে না। ফলে তাদেরকে হয় সেন্ট্রাল অক্সিজেন সেবা অথবা সিলিন্ডারের অক্সিজেন দিয়ে চিকিৎসা করা হচ্ছে,” বলেন তাপস কুমার সরকার।
তিনি বলেন, প্রতিদিন প্রায় ৫০০ অক্সিজেন সিলিন্ডার প্রয়োজন হচ্ছে। হাসপাতালে আছে ৬৪৭টি সিলিন্ডার। এছাড়া ছয় হাজার লিটারের সেন্ট্রাল অক্সিজেন রয়েছে। সেটা দিয়ে ১০ জনকে ২৪ ঘণ্টা অক্সিজেন সাপোর্ট দেওয়া হয়।
হাসপাতালে দায়িত্বরত অনেক চিকিৎসকের সাথে কথা বললে তারা জানান খুব হিমশিম খেয়েই তাদের কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হচ্ছে।
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের সাহকারী অধ্যাপক আক্রামুজ্জমান মিন্টু জানান গত সাত-আট দিন যে সকল রোগী আসছেন তারা আসছেন ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে। আবার তারা আসছেন নিজ হোমে ৭/৮দিন আইসোলেশনে থাকার পর যখন অবস্থা সাংঘাতিক হয়ে যায় তখন। শেষ সময়ে হাসপাতালে আনা হয় তাদের। ততক্ষণে চিকিৎসকদের কিছুই করার থাকে না। বেশিরভাগ রোগীর অক্সিজেন লেভেল ৮০র নিচে চলে যায়।
তিনি জানান, এসব মৃত্যুহার বেশি। এছাড়া এসব রোগীদের অধিকাংশের ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যা, অ্যাজমা, হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস, বøাড প্রেশার ও লিভারের রোগে আক্রান্ত। হাজারো চেষ্টা করেও তাদের বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
করোনা ইউনিটে কাজ করছেন চিকিৎসক রাজীব মৈত্র। তিনি বলেন, প্রায় শ’য়ের বেশি রোগী আছেন, যাদের স্যাচুরেশন ৬০ ভাগের নিচে। তাদের উচ্চ মাত্রায় অক্সিজেন দেয়া দরকার। কিন্তু সামর্থ্য নেই।
দেওয়ান রাশিদুজ্জামান তার স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে আনের গত রবিবার। তিনি কোন বেড পাননি। হাসপাতালের করিডোরে ঠাঁই নিয়েছেন। সার্বক্ষনিক স্ত্রীর পাশে আছেন। তার স্ত্রী উল্কা থাতুনের স্যাচুরেশন ৮০ ; অক্্িরজেন চলছে। তার ডায়াবেটিস আছে।
রাশিদুজ্জামান জানান আক্রান্ত হবার পর দৌলতপুর স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে তার স্ত্রীকে হোম আইসোলেশনে রাখার পরামর্শ দেয়া হয়। হোম আইসোলেশনে অবস্থা বেগতিক দেখে তিনি তাকে সরাসরি এই হাসপাতালে আনেন। তিনি জানান এখন ডাক্তার বলছে অবস্থা খারাপ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রোগীর ভিড়ে হাসপাতালের কোথাও পা ফেলার জায়গা নেই। গাদাগাদি অবস্থা। কোদ হাসপাতালের মধ্যেই বিন্দুমাত্র সামাজিক দুরত্ব নেই। রোগীর স্বজনরা বসে বা শুয়ে আছেন রোগীর পাশেই।
আছে জনবল ও জায়গার অভাব সংকট। চিকিৎসক, নার্স, আয়াসহ সংশ্লিষ্ট সবাই সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবদুল মোমেন জানান রোগীর চাপ বাড়ছেই। প্রতিদিন প্রায় ৪০/৫০ নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছেন। করোনা মুক্ত হয়ে যাচ্ছেন তার অর্ধেকেরও কম। যার কারনে রোগী ডাম্পিং হয়ে যাচ্ছে। তিনি জানান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরো কিছু চিকিৎসা যন্ত্রপাতি দিয়েছেন। সেগুলো অন দ্য ওয়ে রয়েছে।
কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডা. এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, তার জেলা ভাল নেই। খুলনা বিভাগে কুষ্টিয়ার অবস্থান উদ্বেগজনক। সব উপজেলাগুলোতে বাড়ছে মৃত্যু ও শনাক্তের সংখ্যা।
তিনি বলেন কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের সীমিত সামর্থ্যরে মধ্যেই তার ডাক্তাররা যুদ্ধ করে চলেছেন। তিনি জানান চিকিৎসক, নার্স, আয়া সংকটের মধ্যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কুষ্টিয়া জেলা শাখার প্রায় ৬৫ জন নেতাকর্মী জীবনের মায়া তুচ্ছ করে করোনা ইউনিটে গত ৭ মাস ধরে সেবা দিচ্ছেন। এটা হাসপাতালের চিকিৎসা সেবাকে ভেঙে পড়া থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছে।
Leave a Reply