October 12, 2024, 8:40 am
জহির রায়হান সোহাগ, চুয়াডাঙ্গা/
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় বিয়ের ৯ মাস না পেরুতেই স্বামীকে স্যালাইনের সাথে ঘুমের ওষুধ ও বিষ মিশিয়ে খাইয়ে হত্যা চেষ্টা করেছে পরকিয়ায় আসক্ত কাকলী খাতুন নামে এক নারী। স্বামী মাসুদ রানা এখন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। পরে ওই অভিযোগে কাকলী খাতুনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।
শুক্রবার দিনগত রাত ২টার দিকে অভিযান চালিয়ে দামুড়হুদা উপজেলার সাড়াবাড়িয়া গ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর আগে রাত সাড়ে ১২ টার দিকে মাসুদ রানার মা মমতাজ খাতুন বাদী হয়ে দর্শনা থানায় একটি হত্যা চেষ্টা মামলা দায়ের করেন। মামলায় আসামী করা হয় মাসুদ রানার স্ত্রী কাকলী খাতুন ও পরকিয়া প্রেমিক মুকুল আলীকে। গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বামীকে হত্যাচেষ্টার কথা স্বীকার করেছে কাকলী খাতুন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মাসুদের পরিবারের সদস্যরা জানান, জীবননগর উপজেলার হরিহরনগর গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের মেয়ে কাকলী খাতুনের সাথে ৯ মাস আগে বিয়ে হয় দামুড়হুদা উপজেলার সাড়াবাড়িয়া গ্রামের কাদির মন্ডলের ছেলে মাসুদ রানার সাথে। বিয়ের মাস কয়েক পরেই সাড়াবাড়িয়া গ্রামের স্কুলপাড়ার উসমান মোল্লার ছেলে মুকুলের সাথে পরকিয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে কাকলীর। এক পর্যায়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখে তারা। কিন্তু মাসুম হয়ে যায় তাদের পথে কাটা। স্বামী মাসুমকে হত্যা করতে পারলে পরকিয়া প্রেমিক মুকুল বিয়ে করতে পারবে কাকলী। পরে মাসুদকে হত্যার পরিকল্পনা করে কাকলী ও মুকুল। শুক্রবার দুপুরে স্যালাইনের সাথে ঘুমের ওষুধ ও বিষ মিশিয়ে স্বামী মাসুদকে হত্যার চেষ্টা করে কাকলী খাতুন। মুমূর্ষু অবস্থায় স্বামী মাসুদ রানাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মাসুদ রানা জানান, বিয়ের পর থেকে একই গ্রামের মুকুলের সাথে মোবাইল ফোনে কথা ও চ্যাটিং করতো কাকলী। বিষয়টি প্রথমে বুঝতে না পারলেও গত ৪ দিন আগে বুঝতে পারি। বিষয়টি নিয়ে কাকলীর সাথে আমার বাকবিতণ্ডা হয়। শুক্রবার দুপুরে চাষাবাদ শেষে বাড়ি ফিরি আমি। আমার পানি পিপাশা লাগলে কাকলীকে পানি দিতে বলি। সে আমাকে স্যালাইনের পানি দেয়। আমি তা খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ি। এরপর আমার বেশ কয়েকবার বমি হয়।
তিনি আরও জানান, এসময় পিছন থেকে আমার স্ত্রী কাকলী একটি ওড়না দিয়ে আমার গলাই জড়িয়ে টান দেয়। আমি ঝাটকা দিলে কাকুলি পড়ে যায়। আমি ঘর থেকে বাইরে বের হওয়ার চেষ্টা করলে পিছন থেকে আমার মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করে কাকলী। আমি চিৎকার করলে পরিবারের সদস্যরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। পরে আমাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মাহবুবুর রহমান জানান, শুক্রবার দুপুরে মাসুদ বিষপান করেছে বলে পরিবারের সদস্যরা জানায়। পরে তাকে ওয়াশ করা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ভর্তি করা হয়েছে। তবে, সে এখনও আশঙ্কামুক্ত নয়। আগামী ৭ দিন তাকে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে।
এ দিকে, গ্রেফতারের পর স্বামীকে হত্যাচেষ্টার কথা স্বীকার করেন স্ত্রী কাকলী খাতুন। তিনি বলেন, আমি ও মুকুল মিলে আমার স্বামী মাসুদকে হত্যার পরিকল্পনা করি। পরিকল্পনা অনুযায়ী মুকুল দুদিন আগে ঘুমের ওষুধ কিনে দেয় আমাকে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে পানি পিপাসা পেলে আমার কাছে চায় মাসুদ। এ সুযোগে আমি পানিতে স্যালাইন, ঘুমের ওষুধ ও আগে থেকেই সংগ্রহ করে রাখা সলুবোরন নামক কীটনাশক মিশিয়ে দিই। ওই পানি খেয়ে আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পড়ে মাসুদ। মুহুর্তেই শুরু হয় বিষক্রিয়া।
এ বিষয়ে দর্শনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাব্বুর রহমান জানান, মাসুদ রানার মা মমতাজ বেগম বাদী হয়ে রাতেই কাকলী খাতুন ও তার পরকিয়া প্রেমিক মুকুলের বিরুদ্ধে দর্শনা থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। পরে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত স্ত্রী কাকলী খাতুনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বামীকে হত্যাচেষ্টার কথা স্বীকার করেছে কাকলী খাতুন। তাকে আজ আদালতে সোপর্দ করা হবে। হত্যার আরেক পরিকল্পনাকারী মুকুলকে গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে।
Leave a Reply