November 30, 2023, 7:23 pm

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন পোর্টাল
সংবাদ শিরোনাম :
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন/মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন গুচ্ছ নিয়মেই ভর্তি পরীক্ষা, সব বিশ্ববিদ্যালয়কে গুচ্ছে আসার আহবান ইউজিসির নির্বাচন কমিশন/দলীয় এমপিরা স্বতন্ত্রপ্রার্থী হলে পদত্যাগ করতে হবে না নির্বাচন/আ’লীগের ২৯৮ আসনে নতুন মুখ ১০৪, কুষ্টিয়াসহ দুটি আসন শুন্য, শরীকদলের সিদ্ধান্ত ঝুলে আছে এইচএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ/পাসের হার ৭৮.৬৪ শতাংশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন/খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় ক্ষমতাসীন দলের সর্বশেষ হালচাল ইসরায়েল-ফিলিস্তিন নিয়ে মন্তব্য, জার্মানিতে প্রদর্শনী বাতিল বির্তকিত আলোকচিত্রশিল্পী শহিদুল আলমের ঝিনাইদহ/স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে গুলি করে হত্যা পিটার হাসের পরিকল্পনায় বাংলাদেশে সরকারবিরোধী সমাবেশ: রাশিয়া কুষ্টিয়ায় হাইওয়ে পুলিশের জব্দকৃত বাসে আগুন

দুধ বেচতে না পেরে মিষ্টির কারখানা দিয়ে সফল খামারি

জাহিদুজ্জামান/

সর্ব্বোচ্চ লেখাপড়া করে চাকরি ছেড়ে গড়ে তুলেছেন সমন্বিত দুগ্ধ খামার। কুষ্টিয়ার সফল এই খামারি জাকিরুল ইসলাম বাচ্চু এ পর্যায়ে আসতে পদে পদে বাঁধার মুখে পড়েছেন। তিনি বিচক্ষণতার মাধ্যমে সব বাঁধা ঠেলে এসেছেন। গো-খাদ্যের দাম বেড়ে গেলে ১১ বিঘা জমিতে ঘাস চাষ করেছেন। বর্ষায় দুধের দাম পড়ে যায় তাই, দুধ বিক্রির চিন্তা বাদ দিয়ে গড়ে তুলেছেন মিষ্টির কারখানা। এ ফার্ম এবং কারখানায় মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে- এতে তিনি বেজায় খুশি। একই সঙ্গে নতুন খামারিদের পাশে দাড়াচ্ছেন তিনি। দুধের দাম একেবারে পড়ে ৩০টাকার নিচে আসলেও তিনি ৫০টাকা কেজি দরে কিনে নিচ্ছেন।

কুষ্টিয়া সদরের হাটশ হরিপুরে বাড়ি এই খামারি জাকিরুল ইসলাম বাচ্চুর। সেখানেই গড়েছেন লিয়াকত আলী ডেইরি ফার্ম এন্ড সুইটস। কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে অংকে লেখাপড়া শেষ করে জাকিরুল ঢাকাতে যান এমবিএ করতে। জাকিরুল ইসলাম বলেন, মায়ের ইচ্ছা ছিলো আমি চাকরি করবো। তাই, তখনই একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি শুরু করি। মায়ের ইচ্ছা পূরণ হয়। কিন্তু আমার আব্বার ইচ্ছা ছিলো আমি ব্যবসা করি। চাকরির পাশাপাশি যখন এমবিএ শেষ হলো তখন সেই ইচ্ছা পূরণের চিন্তা মাথায় আসলো। ঢাকায় ব্যবসা শুরু করলাম। এরমধ্যে একদিন হঠাৎ করে মাথায় ঢুকলো ডেইরি খামারের চিন্তা। জাকিরুল বলেন, আমি একদিন নিজের অফিস থেকে বাসায় এসে এশার নামাজের পর ফেসবুকে ঢুকছিলাম। হঠাৎ করে একটি গরুর ফার্মের ভিডিও দেখি। অনেকক্ষণ ধরে দেখলাম। পরদিন অফিসে গিয়ে দেশি-বিদেশি অনেক ফার্মের ভিডিও দেখি। বাসায় এসে রাতেও ইউটিউবেও অনেক ভিডিও দেখলাম। ভাল লাগতে শুরু করলো। প্রতিদিনই কিছু না কিছু ভিডিও দেখি। এরকম ১০/১২ দিন চললো- বলছিলেন জাকিরুল। এরপর থেকেই গরুর ফার্ম করার চিন্তা ঢোকে পরবর্তীতে সফল হওয়া এই খামারীর। মা এবং পরিবারের অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করেন তিনি। সবাই সম্মতি দিলে শুরু হয় অভিযাত্রা। কুষ্টিয়া এসে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে গিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেন জাকিরুল। তারা ট্রেনিং নেওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু আমি থাকি ঢাকায় এখানে ট্রেনিং নেব কী করে? বলেন জাকিরুল। এরপর ঢাকায় ফিরে নীলক্ষেত থেকে এ সংক্রান্ত কিছু বই কেনেন জাকিরুল। গরু লালন-পালন করে কিভাবে? তা পড়া শুরু করেন। বিশেষ করে গরুর রোগ কী কী হয়, তার চিকিৎসা কেমন? এসব নিয়ে পড়তে থাকলাম- বলছিলেন জাকিরুল। এর মাঝে ১৫/২০ দিন পরপর আমি যখন কুষ্টিয়াতে যাই প্রাণিসম্পদের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলতে থাকি। তারাও নানা পরামর্শ দিতে থাকেন। এর বাইরে কিছু ফার্ম ঘুরে দেখতে শুরু করেন তিনি। বাংলাদেশে এবং ভারতেও ফার্ম ঘুরে দেখেন। জাকিরুল বলেন, এভাবে জানতে জানতেই আমার দুই বছর চলে যায়। এরপর টাকা পয়সা গোছালাম। শুরু করতে চাইলাম। আমার ছোটভাই সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে ব্যাংকে চাকরি করে ওই সূত্র ধরে সেখানে যাই প্রথম গরু কিনতে। এটা ২০১৫ সালের কথা। আমরা বিভিন্ন যায়গায় ঘুরে ঘুরে গরু দেখলাম। এক পর্যায়ে বাছুরসহ ১১টি গাভী কিনে নিয়ে আসলাম। বিরাট স্বপ্নের যাত্রা শুরু হলো। কিন্তু প্রথম দিনেই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লাম দুধ বিক্রি করতে গিয়ে। ৬০ লিটার মতো দুধ হলো। রাখাল দিয়ে কুষ্টিয়া শহরের বড়বাজারে দুধ বাজারে নিয়ে কোনমতে গিয়ে বিক্রি করলাম। পরের দিনও একই অবস্থা, একইভাবে বিক্রি করলাম। এভাবে কয়েকদিন পর একজন মিষ্টি বিক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ হলো। তিনি ৪০ লিটার করে দুধ নিতে চাইলেন। বাকী দুধ বিক্রি করতে অনেক বেগ পেতে হলো। আমার ফার্মের দুধ ভাল এমন প্রচার চালানো শুরু করলাম। এক পর্যায়ে দুধের চাহিদা বাড়তে থাকলো বলেন জাকিরুল। তিনি বলেন, এরইমধ্যে গরু পালনের নেশা আমার মধ্যে ঢুকে গেছে। আমি ঢাকার কাজের চেয়ে এই কাজে বেশি মনোনিবেশ করতে শুরু করলাম। গরুগুলোকে ভালবাসতে শুরু করলাম। ওরা অসুস্থ হলে মনে হতে লাগলো আমার সন্তান অসুস্থ হয়েছে। এভাবে একমাস চলার পর জাকিরুল আরো তিনটা গাভী কেনেন। সাথে তিনটা বাছুর। তিনমাস কেনেন আরো ৫টা। জাকিরুল বলেন, বড় চ্যালেঞ্জ ফেস করলাম যখন বর্ষাকাল চলে এলো। দুধের চাহিদা কমে গেল, পড়ে গেল দামও। আমি যাদের একশ লিটার দুধ দিতাম তারা বললো ৫০ লিটার করে নেবে। আমি পড়ে গেলাম বিপদে। তখন ৩০টাকা কেজি দুধ বেচতে হয়েছে। এভাবে প্রথম দুই বছর কাটার পর জাকিরুলের মাথায় ভিন্ন চিন্তা এলো। তিনি বলেন, এরমধ্যে প্রথম কেনা গরুর বাছুরগুলো বড় হলো, তারাও গর্ভধারণ করলো। এই সময়ে আমি আরো ৫টি গাভী কিনলাম সেই শাহজাদপুর থেকেই। এতোদিনে মিষ্টির দোকানগুলোর সঙ্গে আমার সম্পর্ক বেশ ভাল হয়েছে। তারপরও দেখলাম বর্ষার শুরু থেকে ৩/৪ মাস দুধ বিক্রি করা কষ্টকর হয়। গোখাদ্যের দাম বাড়তে দেখে আমি নিজেই ১১ বিঘা জমিতে ঘাস লাগালাম। প্রতিবছর আমার গরু বাড়তে থাকলো। এঁড়ে হোক আর বকনা হোক সব বাছুরই আমি পুষতে থাকলাম। একপর্যায়ে গরু যখন ১৪০টি হয়ে গেল তখন কিছু ষাঁড় বিক্রি করে দিতে বাধ্য হলাম। জাকিরুল বলেন, হরিপুরে আমার খামারে জায়গা হচ্ছিল না।

বর্তমানে জাকিরুলের খামারে ১০০ এর বেশি গরু আছে। এর মধ্যে গাভীই আছে ৭০টি। এগুলো দিনে ৩২ লিটার পর্যন্ত দুধ দেয়। সবচে কম দুধ যে দেয় সেও ১৮ লিটার দুধ দেয়। দুধের পরিমাণ বাড়তে বাড়তে ৪০০ লিটার পেরিয়ে গেল। বর্ষাকালে দুধ বিক্রি করা কঠিন হয়ে যায়। তখনই চিন্তা হলো বাই প্রোডাক্ট কিছু করার। জাকিরুল ইসলাম বাচ্চু এরইমধ্যে কুষ্টিয়া ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হয়েছেন। তিনি এ বিষয়ে কথা বলেন, কেন্দ্রীয় সভাপতি সেক্রেটারীর সঙ্গে। তারাও প্রোডাকশনে যাওয়ার পরামর্শ দেন। জাকিরুল বলেন, এরমধ্যে আমি খেয়াল করলাম দুধের দাম কম কিন্তু দুগ্ধজাত খাদ্যের দাম বেশি। তাই আমি মিষ্টির কারখানা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। নেদারল্যান্ড দূতাবাসে এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রেনিং নিই। সেখানেও পরামর্শ দেয়া হয় খামারীরা তার কাচামাল দুধ দিয়ে কোন প্রডাকশনে গেলে লাভবান হবেন। এরপরে করোনা মহামারী শুরু হলো। আমি চিন্তা করলাম মিষ্টির কারখানা এবং দোকান দিলে টিকতে পারবো কি-না। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেও সাড়া পেলাম। এরমধ্যে একজন কারিগরও পেলাম। দোকান নিলাম। কারখানাও স্টার্ট হলো। পরে ঢাকা থেকেও কারিগর নিয়ে এসেছি।

জাকিরুল বলেন, এখন আমার এই কারখানায় ৬১ রকমের মিষ্টি তৈরি হয়। দই, ঘি ও অন্যান্য দুগ্ধজাত খাবারও আছে। আমার এখানে কোন কেমিকেল মেশানো হয়। একেবারে অর্গানিক খাবার দেয়া হচ্ছে মানুষকে। কোন পাউডার দুধ মেশানোর দরকার হয় না আমার। এর মাধ্যমে আমার আরেকটি স্বপ্ন পূরণ হলো- মানুষ স্বাস্থ্যসম্মত এবং ভেজালমুক্ত মিষ্টি দিতে পারছি- বলেন জাকিরুল। তিনি বলেন, খামারে ৮ জন এবং মিষ্টির কারখানা ও দোকানে ১২ জনসহ মোট ২৫জন কর্মী তার এ উদ্যোগের সঙ্গে কাজ করেন। এদের কর্মসংস্থান হয়েছে, মানুষকে ভাল খাবার দিতে পারছি। এতে আমার ভাল লাগে। এসব করে আমার অনেক বড় হতে হবে এমন কোন টার্গেট নেই বলেন জাকিরুল। খামার পুরনো হলেও মিষ্টির কারখানা হয়েছে দুই মাস আগে। এখানে এখনো ইনভেস্ট করতে হচ্ছে। খামারের আয় দিয়েই তা হয়ে যাচ্ছে। জাকিরুল আশা করেন, মিষ্টির ব্যবসার প্রসার ঘটলে মাসে ২/৩ লাখ টাকা লাভ থাকবে। তিনি বলেন, বাই প্রোডাক্ট গরুর গোবর অল্প টাকায় বিক্রি করি। এগুলো স্থানীয় গরীব মানুষ নিয়ে রোদে শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবে বিক্রি করছেন। তারাও স্বচ্ছল হয়েছেন। এগুলো দেখেও ভাল লাগে। তিনি বলেন, ঢাকার ব্যবসা আর ভাল লাগে না। এখন এই ডেইরি ফার্মেই বেশি সময় দিই। নিজেই অনেক কাজ করি। এখানে থাকতেই আমার ভাল লাগে। আমি গরুর জন্য ভূট্টা রান্না করি, পাশাপাশি ভূষি দিই। মাঠের কাচা ঘাস দেই। মেশিন দিয়ে খড় এবং ঘাস কেটে মিশাই। নতুন ফার্ম যারা করতে চান তাদের উদ্দেশ্যে জাকিরুল বলেন, প্রধমে পরিপূর্ণ প্রশিক্ষণ নেবেন। ভালমতো বুঝে শুরু করবেন। তিনি বলেন, দুটি গরু দিয়ে শুরু করলেই দিনে এক হাজার টাকা থাকবে। জাকিরুল বলেন, আমার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে একটি গাভী নিয়ে শুরু করেছেন এমন একজনকে জানি তিনি এখন ৩০টি গাভীর মালিক। নতুন খামারিদের সহায়তা করতে চান তিনি। পরামর্শ দিয়ে সহায়তার পাশাপাশি ভাল দামে তাদের দুধ কিনে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। বলেন, আষাঢ় মাসে যখন দুধের দাম ৩০ টাকারও নিচে চলে আসবে তখনও আমি এদের দুধ ৫০ টাকা লিটার কিনে নেব। সরকারের কাছে নিজের জন্য কিছুই চান না জাকিরুল। তিনি বলেন, যারা সত্যিকারের খামার করে সরকার যেন তাদের প্রণোদনা দেয়। তিনি বলেন, গরুর বিজের সংকট আছে, ব্রিডিং প্রক্রিয়া আরো আধুনিক করা দরকার। পাশাপাশি ভ্যাক্সিন স্বল্পমূল্যে এবং সহজলভ্য হয়। একই সংগে গোধাদ্যের বাজার যদি নিয়ন্ত্রণ করা যায় কি-না? সেটা সরকার দেখতে পারে।

নিউজটি শেয়ার করুন..


Leave a Reply

Your email address will not be published.

পুরোনো খবর এখানে,তারিখ অনুযায়ী

MonTueWedThuFriSatSun
  12345
27282930   
       
      1
9101112131415
3031     
    123
45678910
11121314151617
252627282930 
       
 123456
78910111213
28293031   
       
     12
3456789
24252627282930
31      
   1234
567891011
19202122232425
2627282930  
       
293031    
       
  12345
6789101112
       
  12345
2728     
       
      1
3031     
   1234
19202122232425
       
293031    
       
    123
45678910
       
  12345
27282930   
       
14151617181920
28      
       
       
       
    123
       
     12
31      
      1
2345678
16171819202122
23242526272829
3031     
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
242526272829 
       
© All rights reserved © 2021 dainikkushtia.net
Design & Developed BY Anamul Rasel