March 28, 2023, 5:15 am
দৈনিক কুষ্টিয়া প্রতিবেদক/
কুষ্টিয়া শহরের ঈদগাহ মাঠে কয়েক বছর ধরে সাইকেল নিয়ে কসরত দেখাচ্ছে একদল কিশোর ও তরুণ। তারা সাইকেলের আসন ও হাতলের ওপর পা, মাথা বা হাত রেখে দাঁড়িয়ে চালাচ্ছে। এতে নিজেরা যেমন আনন্দ পাচ্ছে, মুগ্ধ হচ্ছেন দর্শনার্থীরাও।
এই কিশোরেরা হচ্ছে জিরো পয়েন্ট সিক্স গ্রাফিডি রাইডার্স, কুষ্টিয়া নামের একটি গ্রুপের সদস্য।
সাইকেল নিয়ে নানা শারীরিক কসরত দেখানোর পাশাপাশি মাদকবিরোধী প্রচারসহ নানা সামাজিক বিষয় নিয়ে র্যালি করে থাকে।
প্রতিদিনই সকাল-বিকাল এরা কুষ্টিয়া ঈদগাহ মাঠে প্র্যাকটিস করে।
সম্প্রতি ঈদগাহ মাঠে গিয়ে দেখা যায়, কিশোর-যুবকেরা স্টান্ট রাইডিং করছেন। কেউ এক পা আসনে অপর পা হাতলের ওপর রেখে দাঁড়িয়ে সাবলীলভাবে চালিয়ে যাচ্ছে সাইকেল।
কেউ আবার চলন্ত সাইকেলের সিটের ওপর মাথা রেখে দুই পা উপরের দিকে রেখে আছে। সাইকেলের দুটি চাকার একটি উঁচু করে অপরটি দিয়ে চালাচ্ছেন।
হেড স্টান্ট, সার্ফিং, উইলি, টপি, রোলিং এরকম নানা নামের সাইকেল চালানোর মজার এসব কৌশল রপ্ত করেছে এই রাইডাররা।
কথা হয় এসব রাইডারদের কয়েক জনের সঙ্গে। নবম শ্রেণির ছাত্র সুমাই আল হোসেন সাঈদ বলেন, ‘অন্য কোনো খেলা ভালো পারতাম না। সাইকেল চালাতাম। হঠাৎ স্টান্ট রাইডারদের দেখে আগ্রহ হলো। কিন্তু বাড়ি থেকে না করে দিল। বললো হাত-পা ভেঙে যাবে। তারপরও লুকিয়ে লুকিয়ে করেছি।’
সাঈদ বলেন, ‘অভিভাবকরা এখন বুঝেছে যে, আমরা খারাপ কিছু করছি না। ভালো ছেলেদের সঙ্গে মিশি, তাই এখন বাড়ি থেকে বাহবা দেয়।’
জিরো পয়েন্ট সিক্স গ্রাফিডি রাইডার্স, কুষ্টিয়া টিমের সদস্য এসএসসি পরীক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই সাইকেলের প্রতি আগ্রহ ছিল। এখানে এসে বড় ভাইদের দেখে স্টান্ট রাইডিংয়ে খুব আগ্রহ হয়। তাদের সঙ্গে শুরু করি। আমার স্টান্ট রাইডিংয়ের উপযোগী সাইকেলও ছিল না। পরিবার থেকেও এটা মেনে নিতে চায়নি। নিজের চেষ্টাতেই অনুশীলন করে অনেক স্টান্ট রপ্ত করেছি। ইউটিউবে নতুন নতুন স্টান্ট দেখি আর রপ্ত করি।’
বাংলাদেশে যেন এই স্টান্ট রাইডিংকে ক্রীড়া হিসেবে অনুমোদন করে এবং পৃষ্ঠপোষকতা করে সেই দাবি জানান এই রাইডার।
কুষ্টিয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র সোহরাব হোসেন বলেন, ‘অনেকগুলো স্টান্ট আমার জানা আছে। এই রাইড আমার অনেক ভালো লাগে, এটি চালিয়ে যাব।’
শুরুতে কুষ্টিয়ার বেশির ভাগ স্টান্ট রাইডারই নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েছে। অদম্য আগ্রহ আর চেষ্টায় তা জয় করেছে এসব উদ্যমী কিশোর-তরুণেরা।
কুষ্টিয়ায় কোনো অগ্রজকে না পেয়ে ২০১৭ সালে একাই প্র্যাকটিস শুরু করেন রাতিবুর রহমান। তিনিই আগ্রহীদের নিয়ে দল গঠন করেছেন। শুরুতে দামি সাইকেল কেনা এবং আঘাত পেতে পারেন এই আশঙ্কায় পরিবারের সমর্থন পায়নি এসব রাইডাররা। অনেকেই টিউশনি করে রাইডিংয়ের খরচ জুগিয়েছে।
বর্তমানে রাতিবুর জিরো পয়েন্ট সিক্স গ্রাফিটি রাইডার্স, কুষ্টিয়া এর সভাপতি। তিনি কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের ছাত্র। ২০১৭ সালে রাতিবুর পোল্যান্ডে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ানশিপেও যোগ দিয়েছিলেন।
রাতিবুর বলেন, ‘আমি ২০১৭ সালে শুরু করি। ইউটিউবে দেখে কুষ্টিয়ায় অগ্রজদের খুজতে থাকি। না পেয়ে নিজেই প্র্যাকটিস শুরু করি। অনেকবার পড়েছি, আঘাত পেয়েছি। কিন্তু তারপরও চালিয়ে গেছি। এরপর আরও অনেকেই এসেছে। আমার টিম তৈরি হয়। আমরা মাদকবিরোধী সাইক্লিং র্যালিও করি। আমরা চাই যুবসমাজ নেশা থেকে দূরে থাক। ভালো কোনো উদ্যোগের মধ্যে থাকুক। ’
রাতিবুর বলেন, ‘সাইকেলের দাম এখন অনেক। ৩০ থেকে ৩৫ হাজার। এগুলো কিনতে গেলে পরিবার আপত্তি জানায়। দুইটা টিউশনি করে টাকা জোগাড় করেছি। হেলমেটসহ সব গার্ড ব্যবহার করছি আমরা। সে কারণে পড়ে গেলেও আঘাত গুরুতর হয় না, বলেন রাতিবুর।
সকাল বিকাল এসব কিশোর-যুবকদের সাইকেল কসরত দেখে মুগ্ধ দর্শনার্থীরা। মাদক বা খারাপ কাজের দিকে না ঝুঁকে মজার এই রাইডে যুক্ত থাকায় প্রশংসা করেন তারা।
ঈদগাহ মাঠেই কথা হয় কুষ্টিয়া পৌরসভার স্থানীয় ৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রক্তিম উদ্দিন কোয়েলের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এরা মাদক ও ইভটিজিংবিরোধী প্রচারও চালায়। এরা খেলাধুলার মধ্যে আছে। এদের উদ্যোগ আমাকে মুগ্ধ করেছে।’
তিনি এসব কিশোর-তরুণদের সব ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন ।
Leave a Reply