February 8, 2025, 7:21 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া প্রতিবেদক/
একেবারে ধরা ছোঁয়ার বাইরে ছিল কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে পরিচালিত এক আওয়ামী লীগ নেতার ভেজাল দো’জ¦ালী গুড়ের কারখানা। কোন আইনের তোয়াক্কা করতেন না তিনি। জনগন, সমাজ, জনস্বাস্থ্য কোন কিছু নিয়েই তার মাথাব্যাথা ছিল না। নিজের ইচ্ছে মতো চিটাগুড়, ফিটকিরি, চিনি, রঙ ও রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে ভেজাল আখের গুড় তৈরি করে আসছিলেন তিনি। সবাইকে ও প্রকাশ্য বলে বেড়াতেন তিনি ক্ষমতা নিয়ে চলেন ও সবাইকে ম্যানেজ করে এসব করেন।
অবশেষে শনিবার একটি ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান পরিচালনা করে কারখানাটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। একই সাথে ঐ আওয়ামী লীগ নেতা ও তার ভাইকে ১ মাসের জেল দেয়া হয়েছে। জরিমানা করা হয়েছে লক্ষ টাকা।
ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা হলেন দিলীপ বিশ্বাস। তিনি খোকসা পৌরসভা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক। তার সকল কর্মকান্ড ও ক্ষমতার ভিত্তি ও উৎস খোকসা তথা কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা।
শনিবার (৩ এপ্রিল) বিকেলে দিলীপ ট্রেডার্স নামের ওই ভেজাল আখের গুড় তৈরির কারখানায় অভিযান পরিচালনা করেন খোকসার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইসাহক আলী। তবে বিকেলে সেখানে প্রবেশ করলেও তিনি বিভিন্নভাবে বাধাপ্রাপ্ত হতে থাকায় কাজ শেষ করতে সন্ধ্যে গড়িয়ে রাত হয়ে যায়। রাতেই বসানো হয় আদালত জরিমান করা হয় ১ লক্ষ টাকা ও ১ মাসের জেল দেয়া হয় আওয়ামী লীগ নেতা দিলিপ বিশ^াস ও তার ছোট ভাই রাজকুমার বিশ্বাসকে। একই সঙ্গে কারখানাটি সিলগালা করে দেয়া হয়।
তাদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয় খোকসা থানায়।
অভিযান পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইসাহক আলী জানান, দীর্ঘদিন ধরে এই প্রতিষ্ঠানটি নকল গুড় উৎপাদন করে আসচিলেন দিলিপ। ভেজাল গুড় তৈরির জন্য সেখানে মজুদ বেশকিছু কেমিক্যাল উদ্ধার করা হয় যা জনস্বাস্থ্য বিরোধী।
বিভিন্ন সূত্র বলছে ঐ কারখানাতে অভিযানের পরপরই উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েক নেতা নানভাবে ভ্রাম্যমান আদালতকে প্রভাবিত করা চেষ্টা করে। বাধাসৃষ্টি করে আদালতের কার্যক্রম বিলম্বিত করা চেষ্টা করে।
অভিযান পরিচালনায় বাধাপ্রাপ্ত হন কি না এমন বিষয়টি তিনি এড়িয়ে গেলেও জানান আইনের মধ্যে থাকলে কোন বাধাই বাধা নয়।
যেভাবে গুড় তৈরি হতো////
ঐ কারখানাতে আখের গুড় তৈরি হতো। আখের গুড় তৈরি করতে আখের রস লাগবেই। কিন্তু এখানে আখের রসের কোন বালাই-ই নেই। সেখানে গুড় তৈরির প্রধান উপাদান টিচাগু ও ময়দা। নিদ্দিষ্ট মাত্রায় ময়দা ও চিটাগুড়ের সঙ্গে পানি ও চিনি মিশিয়ে চুলায় একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় জ¦ালিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করা হয়। ওই মিশ্রণে কাপড়ে দেয়া লাল রং (মিনা রং) ও নানা রাসায়নিক যার অন্যতম হলো হাইড্রোজ মিশিয়ে গুড় তৈরি হয়। পরে ওই গুড় মাটির গামলা ও ঐ চিটাগুড়ের বক্্ের ভরে ঠান্ডা করা হয়।
চিটাগুড় সাধারণতো কালচে লাল হয়ে থাকে। টিটাগুড় থেকে গুড় তৈরিতে রং-এর ব্যবহার বাধ্যতামুল না হলে গুড়ের রংটি গুড়ের মতো হবে না। এই ক্ষতিকর রং-এর ব্যবহার হয়ে থাকে শ্রমিকদের ইচ্ছেমতো। রং-ব্যবহার করার পর ব্যবহার করা হয় ফিটকারী। যাতে করে গুড়ের রং-এ একটি সাদাটে ভাব আসে।
ম্যাজিস্ট্রেট ইসাহক আলী জানান পুরো প্রক্রিয়ার কোন স্তরেই স্বাস্থ্যসম্মত বলে কোন কথা নেই।
তিনি জানান কারখানাটিতে প্রতি সপ্তাহে কয়েক টন গুড় তৈরি হচ্ছিল। এই গুড়ের অন্যতম ক্রেতা হলো সাভার, কেরানীগঞ্জ, রাজধানীর কারওয়ান বাজার, নরসিংদী, গাজীপুরের বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা।
সামনে রোজাকে সামনে রেখে এই উৎপাদন বাড়ানোর প্রসুÍতি নেয়া হচ্ছিল কারখানাটিতে। এ লক্ষ্যে ২০০ টিন চিটাগুড় আমদানী করা হয়েছিল চট্রগ্রাম থেকে।
Leave a Reply