October 15, 2024, 9:47 am
(ছবি: সোস্যাল মিডিয়া থেকে সংগৃহিত)
দৈনিক কুষ্টিয়া প্রতিবেদক/
পুলিশ, র্যাব এবং সিআইডি পরিচয়ে কুষ্টিয়ায় একের পর এক ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। এসবের বেশিরভাগের শিকার হচ্ছেন কলেজ শিক্ষার্থীরা। ছিনতাইকারীরা তল্লাসের নামে নিয়েছেন, মোবাইল ফোন, ব্যাগ ও টাকা। কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মো: খাইরুল আলম বলেছেন, আমরা কাজ করছি, অচিরেই ফল পাবেন। ভুক্তভোগীদেরকে থানায় যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি। কিন্তু এসব ঘটনায় অভিযোগ পেলেও কোন মামলা বা জিডি নেওয়া হয়নি- বলেছেন কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি শওকত কবীর।
৪ মার্চ বৃহস্পতিবারেই ঘটেছে দুটি ঘটনা। দুপুর ১২টায় কুষ্টিয়া মিরপুরের শিক্ষার্থী সাঈদ আহমেদ (১৯) গিয়েছিলেন হরিপুর সংযোগ সেতু দেখতে। নম্বরবিহীন একটি মোটরসাইকেলে করে সেখানে হাজির হয় দুই জন। ইয়াবা আছে বলে পুলিশ পরিচয়ে তল্লাস করতে গিয়ে তার মোবাইল ফোন, মোটর সাইকেল ও রেজিস্ট্রেশনের কাগজ নিয়ে দুজন দুটি মোটর সাইকেলে চলে যেতে উদ্যত হয়। এসময় সাঈদ পেছন থেকে লাফ দিয়ে তার মোটরসাকেলে উঠে পড়েন, এবং চিৎকার করতে থাকেন। তাকে ফেলে দেয়ার জন্য ছিনতাইকারী চালকও ধাক্কা দিতে থাকে। কিন্তু সাঈদও নাছোড়। একপর্যায়ে বাঁশগ্রাম রাজ্জাক মোড়ে দাঁড় করিয়ে তাকে নামিয়ে দেয়। সুযোগ পেয়ে সাঈদ তার মোটর সাইকেলের চাবি নিয়ে দৌড়ে পাশের বাড়িতে ঢুকে চিৎকার করে লোক জড়ো করে ফেলে। এরপর ছিনতাইকারীরা তাদের মোটরসাইকেল চড়ে পালিয়ে যায়। সাহসিকতার কারণে মোটরসাইকেল ফিরে পেলেও সাঈদ হারান তার স্যামস্যাং জে সেভেন স্মার্ট ফোন। কুষ্টিয়া মডেল থানায় অভিযোগ নিয়ে যান তিনি।
৪ মার্চ আরেকটি ঘটনা ঘটে শহরের আড়ুয়াপাড়ায়। দুই বোন কলেজ শিক্ষার্থী ফারিয়া ইসলাম সাথী ও মারিয়া ইসলাম বীথিকে আসামী হিসেবে হাতকড়া পড়ানোর কথা বলে এবং মোবাইল ফোনে কললিস্ট চেক করতে থাকে ছিনতাই চক্রের সদস্যরা। এরাও নম্বরবিহীন মোটরসাইকেলে এসেছিল। পরে মোবাইল দুটি নিয়ে চম্পট দেয় তারা। এরাও যান কুষ্টিয়া মডেল থানায়।
মডেল থানার ওসি শওকত কবীর বলেছেন দুটি ঘটনারই অভিযোগ নিয়ে এসেছিল ভ’ক্তভোগীরা। আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মামলা বা জিডি নেয়া হয়নি।
এর আগে ১ মার্চ কুষ্টিয়া শহরের পোস্ট অফিসের সামনে থেকে সিআইডি পরিচয়ে মোছাম্মৎ কোনিকা নামের এক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মোবাইল ছিনতাই হয়।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টায় ডোরা খাতুন নামে এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকার কাছ থেকে প্রশাসনের সদস্য পরিচয় দিয়ে মোবাইল ফোন ছিনতাই করা হয়।
একই দিনে বেলা সাড়ে ১১ টায় কুষ্টিয়া সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষার্থী ফারজানা আক্তার জ্যোতি বাড়ি ফেরার পথে কুমারখালী উপজেলার আলাউদ্দিননগর বাসস্ট্যান্ডে নামলে র্যাব পরিচয়ে দুইজন মোটরসাইকেল আরোহী জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনে ভুক্তভোগীর হাতে থাকা মোবাইল ফোন ছিনতাই করে নেয়।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি মো. তারেক হোসেন নামের এক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ডিবি পুলিশ সদস্য পরিচয়ে ইয়াবা আছে এমন অভিযোগ দিয়ে তল্লাস করার নামে মানিব্যাগ ও মোবাইল নিয়ে যায়।
গত ২১ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী আমিন হোসেনকে পিয়ারাতলায় র্যাব সদস্য পরিচয়ে পথরোধ করে তার মোবাইল ফোন ছিনতাই করা হয়।
গত ২০শে ফেব্রুয়ারি আমিন হসপিটালে চিকিৎসা নিতে আসা ২শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে করা হয় ছিনতাই।
গত ১৯শে ফেব্রুয়ারি এইচএসসি পরীক্ষার্থী জেরিন আক্তার ব্যক্তিগত কাজে শহরের হাসপাতাল মোড়ে দাড়িয়ে ছিলেন। হঠাৎ একই কৌশলে দুজন এসে র্যাব সদস্য পরিচয় দিয়ে তার ব্যাগ তল্লাস করে। এ সময় ছিনতাইকারীরা ব্যাগে থাকা মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যায়। বেশিরভাগ ঘটনায় ছিনতাইকারীরা ভুক্তভোগীকে প্রশাসনের অন্য সদস্যরা আসছে বলে দাঁড় করিয়ে রেখে চলে যায়।
জেরিন আক্তার জানান, প্রশাসনের পরিচয় দিয়ে তার কাছ থেকে করা হয়েছে ছিনতাই। পরে বুঝতে পেরেছি। এসপি স্যারের সঙ্গেও সরাসরি কথা হয়েছে। জেরিন আক্তারের ঘটনায় কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি শওকত কবীর বলেছেন, তিনি র্যাবের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। অথচ এই ঘটনায় কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার তিনজন অথিরিক্ত পুলিশ সুপারকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তাকে থানায় পাঠানো হয়। এ ঘটনায়ও কোন মামলা বা জিডি নেয়া হয়নি। জেরিন আক্তার বলেন, পুলিশ তাকে কিছু সিসি ক্যামেরার ভিডিও দেখিয়েছে। সেখানে অপরাধীদের স্পষ্ট দেখা যায়নি। শুধু জেরিন নিজেকেই দেখেছেন।
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মো: খাইরুল আলম বলেন, ইউনিফর্মধারী এবং সাদা পোশাকের পুলিশ কাজ করছে। ফলাফল পাবেন। কেন মামলা বা জিডি নেয়া হচ্ছেনা এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভ’ক্তভোগীরা থানায় গেলে কেস বাই কেস আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a Reply