October 10, 2024, 6:36 am
দৈনিক কুষ্টিয়া প্রতিবেদক/ বিবিসি অবলম্বনে/
চালের দাম আবারো বাড়ার কারনে দেশে উদ্গেব তৈরি হয়েছে। সরকার বলছে, আড়তদার আর মিল মালিকদের কারসাজির কারণে দেশে চালের দাম বাড়ছে। যার কারণে চালের বাজারে স্থিতিশীলতাও থাকছে না। সরকার বলছে, প্রচলিত আইনে এসব আড়তদার বা মিল মালিকদের বিরুদ্ধে খুব বেশি ব্যবস্থা নেয়া যায় না।
কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “প্রচলিত যে আইন আছে তাতে খুব বেশি অ্যাকশন নেয়া যায় না। আর তারাও ভয় পায় না।”
“তারা মনে করে যে আইনগত ভাবে তাদের বিরুদ্ধে আমরা তেমন কোন ব্যবস্থা নিতে পারবো না।”
পাঁচ মাস আগে বাংলাদেশের ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট আভাস দিয়েছিল যে, এ বছরেরে শেষে প্রায় সাড়ে ৫৫ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত থাকবে। পরে অবশ্য তা কমিয়ে বলা হয় যে, জুন নাগাদ ৩০ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত থাকবে।
সপ্তাহ খানেক আগে খাদ্য সচিব বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন যে, প্রত্যাশার চেয়ে উৎপাদন কিছুটা কম হলেও ধান বা চালের কোন সংকট নেই।
তবে কৃষিমন্ত্রী বলেন, সরকারি গুদামে চালের ঘাটতি রয়েছে।
সরকারি হিসেবে ৫ লাখ ৫১ হাজার ২৯০ টন চাল মজুদ আছে, যদিও গত বছর একই সময়ে মজুদ ছিলো প্রায় সাড়ে দশ লাখ টন চাল।
আর এ কারণেই চলতি বছর বিদেশ থেকে ৫-৬ লাখ টন চাল আনার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এরইমধ্যে প্রথম চালানের ৫০ হাজার টন চাল দেশে পৌঁছেছে। আর জানুয়ারির মধ্যে আরও অন্তত দেড় লাখ টন চাল বাংলাদেশে আসবে।
কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “গুদামে কম চাল থাকাতে বাজারের নিয়ন্ত্রণটা ওদের হাতে চলে গেছে।”
আড়তদারদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয় এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, “আমরা অনেক লাইসেন্স বাতিল করি, বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেই। কিন্তু তারা কিছুদিন সাফার করে আবার আবেদন করে, জরিমানা দিয়ে আবার সংযোগ নেয়।”
রাজধানী ঢাকার নুরের চালা এলাকার বাসিন্দা পারুল বেগম। চার সন্তান আর স্বামীকে নিয়ে সংসার তার।
পারুল বেগম জানান, স্বামীর অসুস্থতার পর সংসারের হাল ধরেছেন তিনি। কাজ করেন গৃহকর্মী হিসেবে। সংসারের খরচ টানতে টানতে হাঁপিয়ে উঠছেন।
পারুল বেগম বলেন, যে চাল কয়েক মাস আগেও ১৬-১৭শ টাকায় কিনেছেন তিনি, সেই চাল এখন কিনতে হচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ দামে।
“৫০ কেজি চাল আনতাম ১৬শ টাকা দিয়া। এখন হইছে তিন হাজার টাকা। ডাবল।”
তিনি বলেন, খরচ মেটাতে না পেরে খাওয়ার পরিমাণ আগের চেয়ে কমিয়ে দিয়েছেন তারা।
“মেনেজ তো করতে পারি না। এখন এক ওয়াক্ত খাইয়া, আরেক ওয়াক্ত না খাইয়া, বাচ্চাগুলারে কম কম খাওয়াইয়া, কোন রকমে দিন যাইতেছে,” বলেন তিনি।
অর্থনীতিবিদরাও বলছেন, মজুতদার ও মিল মালিকদের মজুদের যে অভিযোগ রয়েছে তা প্রমাণ করা কঠিন। কারণ বাংলাদেশের মজুদ আইন অনুযায়ী তারা কোন আইন ভঙ্গের অপরাধের মধ্যে পড়ে না।
মজুদ আইন অনুযায়ী, একটি রাইস মিল ১৫ দিনে যে পরিমাণ ধান থেকে চাল প্রক্রিয়াজাত করতে সক্ষম, তার পাঁচগুণ ধান এবং দ্বিগুণ চাল সর্বোচ্চ ৩০ দিন পর্যন্ত মজুদ করতে পারবে।
বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের গবেষক নাজনীন আহমেদ বলেন, কিছু কিছু অটো-রাইস মিল বিশালাকার হওয়ার কারণে আইন মেনেই ব্যাপক পরিমাণ ধান ও চাল উদ্বৃত্ত রাখতে সক্ষম। সেখানে তাদের দোষারোপের জায়গা নেই।
“আমি যদি মজুদদার ও আড়তদারদের কারসাজির কথা বলি তাহলে তার প্রমাণ থাকতে হবে।”
অর্থনীতিবিদ নাজনীন আহমেদ বলেন, এক্ষেত্রে হয় সরকারকে মজুদ আইন বাতিল করতে হবে নাহলে সংস্কার করতে হবে।
তিনি বলেন, “সরকার বলছে যে ইচ্ছা করে ধরে রাখছে, তাহলে আপনি আইনে কেন এতো ধরে রাখার অনুমতি দিয়েছেন? সে যদি আইন ভঙ্গ করে থাকে তাহলে ধরেন তাকে।”
এই অর্থনীতিবিদ মনে করেন, দেশে যে ছোট ছোট রাইস মিল এবং চাতাল রয়েছে সেগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা কম এবং সে হিসেবেই আইনটি করা হয়েছিল। তখন এসব রাইস মিলগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা ছিল বলেও জানান তিনি। তবে এখন বিশালাকার অটো রাইস মিলগুলো এতো বেশি উৎপাদন করে যে, হাতে গোনা কয়েকজন উৎপাদনকারী বাজারের একটি বিশাল অংশ নিয়ন্ত্রণ করেন।
তিনি মনে করেন, অটো রাইস মিলের আকার কত বড় হবে সে বিষয়ে ভাবার সময় এসেছে।
চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে আরো আগেই আমদানির সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত ছিল বলে মনে করেন তিনি। তবে সেটি হয়নি।
বর্তমানে চাল আমদানির যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা বোরো মৌসুমে ধানের দামের উপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।
আমদানির পরিবর্তে মিল মালিকদের সাথে বৈঠক করে তাদের বাজারে চাল ছাড়ার ব্যবস্থা করার উপর জোর দেয়া উচিত বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ নাজনীন আহমেদ।
Leave a Reply