November 12, 2024, 8:00 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া প্রতিবেদক, দৌলতপুর/
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে সরকারি খাস জমিতে অবৈধ ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। আর এ ইটভাটায় অবাঁধে পুড়ানো হচ্ছে কাঠ। সরকারি জমিতে ইটভাটা স্থাপনের বিষয়ে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করার চার বছর পার হলেও অদ্যবধি কোন পদক্ষেপ নেয়নি প্রশাসন।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার রিফাইতপুর ইউনিয়নের ৭৮নং সোনাইকান্দি মৌজার ৮৮ ও ১ নং খতিয়ানভুক্ত ১৩১, ২৬৩ ও ২৬৭ দাগের ৬ একর ৫৬ শতাংশ জমির উপর নজরুল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ী ২০১২ সালে অবৈধভাবে ইটভাটা স্থাপন করেন। জনবসতি এলাকায় অবৈধ ইটভাটা স্থাপনের ফলে এলাকাবাসী নানা দুর্ভোগে পড়েন। ভাটার কালো ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্ট সহ বিভিন্ন ধরণের রোগে ভূগে ভাটা সংলগ্ন বসবাসরত লোকজন।
সরকারি খাস জমিতে অবৈধভাবে স্থাপন করা ইটভাটা উচ্ছেদ করে সরকারী জমি উদ্ধারের জন্য আব্দুল জলিল খান ২০১৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেন। বিষয়টি তদন্ত করে সরকারী সম্পত্তিতে ইটভাটা স্থাপন করার বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ০০.০০০.৫০০০.০০৫.৪৭.০২৬.১৬-৬৯ (যুক্ত) স্বারকে জেলা প্রশাসকের নির্দেশক্রমে তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আবু হেনা মোঃ মোস্তফা কামাল স্বাক্ষরিত সোনাইকান্দি মৌজার ৮৮ খতিয়ানের ১৩১, ২৬৩, ও ২৬৭ দাগের ৬ একর ৫৬ শতাংশ জমির মধ্যে ৩ একর ২২ শতাংশ অর্পিত সম্পত্তি সরকারী দখল গ্রহণ করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়। একইসাথে ওই অর্পিত সম্পত্তি দখল গ্রহণ নিশ্চিত পুর্বক ১০ কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট পত্র প্রেরণ করা হয়। কিন্তু ৪বছর পার হতে চললেও অদ্যবধি অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ ও সরকারী জমি উদ্ধারের কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এ ব্যাপারে অভিযোগকারী আব্দুল জলিল খান জানান, দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় এলাকাবাসীর মনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
তবে ইটভাটা মালিক নজরুল ইসলাম জানান, ওই জমির মালিকানা দাবী করা রিফাইতপুর গ্রামের মৃত দিয়াতুল্লাহ সরকারের ছেলে গিয়াস উদ্দিন সরকারের কাছ থেকে তিনি লিজ নিয়েছেন। গিয়াস উদ্দিন সরকার ২০১৩ সালে হাইকোর্টে ৫২৭৭/২০১৩ রিট পিটিশন দাখিল করেন। যে রিটের কারণে ওই জমিতে ৩ মাসের স্থগিতাদেশ ছিল।
এলাকাবাসী জানায়, গিয়াস উদ্দিন সরকার দীর্ঘ চার বছরেও ওই রিট পিটিশন টি নিস্পত্তি না করে পুনঃরায় ২০১৭ সালের ১৭ এপ্রিলে স্বাক্ষরিত ৫২৭৭/২০১৩ রিট পিটিশনের একটি কপি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রেরণ করেছে। যার সময়সীমাও ২০১৭ সালের ১৭ অক্টোবর শেষ হয়েছে বলে জানাগেছে। ২০১২ সালে ওই সরকারী খাস জমিতে ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশন ও এফএম বেতার ষ্টেশন তৈরীর জন্য তৎকালীন সংসদ সদস্য আফাজ উদ্দিন আহমেদ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পেশ করলে তা প্রাথমিক ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এরপর গিয়াস উদ্দিন সরকার তা বন্ধের জন্য হাইকোর্টে রীট পিটিশন দাখিল করেন। রহস্যজনকভাবে ওই একই জমিতে অবৈধভাবে ইটভাটা গড়ে ওঠায় এলাকাবাসী চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
এ বিষয়ে দৌলতপুর সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আজগর আলী বলেন, ওই জমিটা ‘ক’ তালিকাভূক্ত অর্পিত সম্পত্তি। ওই সম্পত্তি নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা চলমান থাকায় এই মুহুর্তে কিছ করা যাচ্ছে না। শুধু এই ইটভাটাতেই নয়, উপজেলার বেশিরভাগ ইটভাটা পরিবেশের আইন না মেনে চলছে। এতে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে উজাড় হচ্ছে বৃক্ষ।
Leave a Reply