November 15, 2024, 3:09 am
দৈনিক কুষ্টিয়া প্রতিবেদক,ভেড়ামারা/
মাত্র ১৫দিন আগে নিজের পছন্দে প্রেমিক সোহেলকে বিয়ে করেছিলো ভাবনা খাতুন। স্বামীর হাত ধরে চলে এসেছিল তার বাড়িতে। কিš‘ সে জানতো না তার স্বামীর পরিবারের অমতে বিয়ে করে কি বিপাকে তাকে পড়তে হবে। অবশেষে জীবন দিতে হলো ভাবনাকে। তবে বিয়ের পরপরই ভাবনা জানতে পেরেছিল তার শাশুরী ঝরণা খাতুন তাকে পছন্দ করেনি। তাই শাশুরীর অত্যাচার শুরু হয় তার উপর বিয়ের দিন থেকেই। প্রতিদিন ঝগড়া বিবাদ, অপমানসূচক নানা কথাবার্তা তাকে ঘিরেই। মায়ের কথা মতো শেষপর্যন্ত স্বামী সোহেলও ভাবনার সাথে বৈরি আচরণ শুরু করে। অবশেষে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় তেইশ বছরের ভাবনা।
ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার (২৬ অক্টোবর) কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের ঠাকুরদৌলতপুর গ্রামে।
ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) কর্মকর্তা শাহ জালাল জানান ঘটনার পরপরই পুলিশ হেফাজতে নিয়ে আসে ভাবনার স্বামী সোহেল ও শাশুরী ঝরণা খাতুনকে। রাতভর জিজ্ঞাসার পর জানা যায় আত্মহত্যা করেছে ভাবনা। তবে ভাবনার আত্মহত্যার পেছনে ছিল স্বামী সোহেল ও শাশুরী ঝরণার অব্যাহত অত্যাচার। তাকে প্ররোচিত করা হয় আত্মহত্যার জন্য। পুলিশ মঙ্গলবার ভোরে একটি আত্মহত্যা প্ররোচনার মামলা গ্রহন করে সোহেল ও ঝরণা খাতুনকে গ্রেফতার দেখিয়েছে।
উপজেলার বাহাদুরপুর পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এস আই জাহাঙ্গীর হোসেন ঘটনার বর্ণনাায় জানান পাবনা জেলার ঈশ^রদি উপজেলার পিয়ারপুর গ্রামের নজরুল ইসলামের কন্যা ভাবনা খাতুনের সাথে ফেসবুকে যোগাযোগের সুত্র ধরে প্রেমের সর্ম্পক গড়ে ওঠে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার ঠাকুর দৌলতপুর গ্রামের মহিবুল ইসলামের ছেলে সোহেলের। ভাবনার পিতা পেশায় একজন মুদি দোকানী। ভাবনার আগে একটি বিয়ে হয়েছিল। বিয়েটি টেকেনি। সোহেলের সাথে প্রেমের এক পর্যায়ে তারা পরিবারের বাইরে যেয়ে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। ১১ অক্টোবর তারা গোপনে বিয়ে করে। সোহেল তাকে নিয়ে আসে নিজ বাড়িতে।
বিয়েতে সোহেলের পরিবারের কারো মত না থাকায় ভাবনাকে সোহলের কাছ থেকে বি”িছন্ন করে একটি ঘরে রাখা হয়। একই সাথে চলে ভাবনার উপর নানা মানসিক নির্যাতন। তাকে ঠিকমতো খেতে ও গোসল করতে দেয়া হয়নি বলে জানতে পারেন ঐ পুলিশ কর্মকর্তা। এমনকি ভাবনার পরিবারের লোকজন সোহেলের বাড়িতে এলেও তাদেরকে তাড়িয়ে দেয়া হয়।
এস আই জাহাঙ্গীর হোসেন জানান ভাবনার পরিবারের লোকজনও এক পর্যায়ে তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। অন্যদিকে স্বামী সোহেলও এক পর্যায়ে ভাবনাকে জানিয়ে দেয় তার সাথে সংসার করা সম্ভব নয়।
“তখন ভাবনার কাছে নিজের জীবনকে শেষ করে দেয়ায় হয়তো একমাত্র পথ মনে হয়,” জানান ঐ পুলিম কর্মকর্তা। তিনি জানান সোমবার বিকেল থেকেই ভাবনা ঘরের দরজা বন্ধ করে রাখে। ঘর থেকে কোন সাড়াশব্দ না আসায় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বেড়ার ফাঁক দিয়ে টর্চের আলো ফেলে দেখা যায় ভাবনার লাশ ফ্যানের সাথে ঝুলছে। নিজ ওড়না দিয়ে সে আত্মহত্যা করে।
পুলিশ লাশ উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়েছে।
এ রির্পোট লেখা পর্যন্ত ভাবনার পরিবারের কারো সাথে যোগযোগ করা যায়নি।
ওসি শাহ জালাল জানান ভাবনার স্বামী সোহেল ও শাশুরী ঝরণা খাতুনকে আদালতে নেয়া হবে।
Leave a Reply