December 12, 2024, 4:40 am
একটি দৈনিক কুষ্টিয়া প্রতিবেদন/
সাধারণ অন্যান্য বারের ঈদের চেয়ে ব্যতিক্রম ছিল এবারের ঈদে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের চিত্র। ঈদরে সময়গুলোতে রোগীর পরিমাণ একটু কম থাকায়, চাপও কম থাকে। কেউ কেউ ছুটি পান। চলে যান পরিবারের সাথে ঈদ করতে। কিন্তু চলমান ক্রান্তিকালে চিকিৎসা-সর্ম্পকযুক্ত সবারই ব্যস্ততা বেড়েছ বহুগুণে। তাদের ছুটি নেই-ই বলা যায়। নিয়ম মেনে কয়েকদিবসের কর্ম-ব্যস্ততার পর কয়েকদিনের হোম কোয়ারেন্টাইন। আবার কাজে যোগদান। ঝুঁকিও বেড়েছে ডাক্তার নার্সদের। কারন বিশেষ করে কে আক্রান্ত আর কে আক্রান্ত নয়। চিকিৎসা দিতে সবারই স্পর্শে আসতে হচ্ছে তাদের।
ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে কর্মস্থলে থাকতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
করোনাভাইরাসের এ মুহূর্তে সারা বিশে^র মতো বাংলাদেশেও নিজেদের অনেক আনন্দ বিসর্জন দিয়েছেন অসংখ্য চিকিৎসক ও নার্সরা। ঈদেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। কুষ্টিয়ার একমাত্র জেনারেল হাসপাতালেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। সাধারন রোগী ও করোনা রোগীদের সেবা দিয়েই কেটেছে তাদের দিন। তবে এসব মেনে নিয়েছেন তারা। বলছেন, এটির মাঝেই আনন্দ খুঁজে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সেবা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে পিসিআর ল্যাব রয়েছে। এখানে করোনার চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। চলছে করোনা পরীক্ষা। সেখানেই চিকিৎসা চলছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে থাকা রোগীদের।
শনিবার ঈদের দিনও হাসপাতালে কাটিয়েছেন ২৯৪ রোগী। যাদের মধ্যে ৩১ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত । ১১ জন আছেন নিবিড়-পরীক্ষাধীনে।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. তাপস কুমার সরকার। তিনি জানান দেশের এ ক্রান্তিলগ্নে তিনি এই হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসকের দায়িত্বপালন করছেন।
তিনি বলেন, ঈদে তার দায়িত্ব আরো বেড়েছে। ফিরতে পারেননি পরিবারের কাছে। নিজেদের হাসি-খুশি আনন্দকে বিসর্জন দিয়েছেন মানুষের সেবায়। সারাদিনে বেশ কয়েকবার হাসপাতালে রাউন্ড দিয়েছেন তিনি। তত্বাবধান করেছেন।
তিনি জানান পিসিআর ল্যাবে রবিবার থেকে নমুনা পরীক্ষা হবে।
তিনি জানান, কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ঈদের দিন ১৭ জন চিকিৎসক, ৭০ নার্স রোগীদের সেবা করছেন।
এখন চিকিৎসক ও নার্সদের খাওয়া দাওয়া হাসপাতালেই হয়েছে বলে তিনি জানান। নিজেরা চাঁদা তুলে ঈদ উৎসব করেছেন। এখানে আলাদা কোন বরাদ্দ নেই।
একজন ডাক্তারের সাথে কথা হয়। ঈদের দিনও দায়িত্ব পালন করছেন এ চিকিৎসক। তিনি জানান, সেবার মানসিকতা নিয়েই আমাদের এ পেশায় যোগদান। দুর্যোগকালীন সময়ে সেবা দেব না, সেটি করা যায় না। জীবনের ঝুঁকি থাকলেও আমাদের সেবা দিতে হবে। তবে সাধারণ অনেক মানুষ রয়েছে, চিকিৎসকদের বদনাম করেন। তবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যখন চিকিৎসকরা করোনা আক্রান্তদের সেবা দিচ্ছেন তখন চুপ রয়েছেন। অনেক চিকিৎসক ইতোমধ্যে মারাও গেছেন। সাধারণ মানুষ ভাবে না দায়িত্বপালন কত কঠিন।
ঈদের দিনে রোগীদের সেবা দিয়েছেন হাসপাতালের একজন নার্স জানান, আমাদের এখন ঈদ নেই। আমরা ছুটি নিয়ে ঈদ কাটাতে গেলে রোগীদের সেবাদানে ব্যাহত হবে। বিশেষ করে করোনা মহামারির এ সময়ে নার্সরা নিজেদের আনন্দ, পরিবারের আনন্দ বিসর্জন দিয়ে রোগীদের সেবার কাজ করছেন। ঈদের দিনও ডিউটি করছি, খারাপ একটু লাগলেও সেটিকে মেনে নিয়েছি।
ডাক্তার তাপস জানান সারাদেশের সঙ্গে কুষ্টিয়াতেও করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। মানুষদের অসাবধানতা ও অচেতনতাই এর জন্যে অনেকাংশে দায়ী। ঈদের দিনও চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফরা ডিউটি করছেন। পরিবারের সঙ্গে সময় দিতে পারছেন না এটা কষ্টদায়ক বটে তবে এ দুর্যোগকালীন সময়ে মানুষের কথাও ভাবতে হবে, দেশের কথা ভাবতে হবে। এসব ভাবনা নিয়েই কোনো প্রকার কষ্ট ছাড়াই চিকিৎসক ও নার্সসহ স্টাফগণ সেবার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। করোনার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে জড়িতরা সেবার কাজ চালিয়ে যাবে।
Leave a Reply