December 13, 2024, 2:08 pm
এস.এম.শামীম রানা/
বুধবার (13 মে) থেকে কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালত ও চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট কোর্টে শুরু হচ্ছে ভার্চুয়াল জামিন শুনানী।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার (12 মে) কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ এর কার্যালয় থেকে পক্ষগণ ও আইনজীবীদেরকে শারীরিক উপস্থিতি ব্যতিরেকে বিচার কার্য পরিচালনার লক্ষ্যে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে শুনানী অংশগ্রহনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ১৩ ও ১৪ ই মে ভার্চুয়াল শুনানীর জন্য ৭৯ টি বিবিধ মামলার কজলিষ্ট সরবরাহ করা হয়েছে।
এছাড়াও কুষ্টিয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল, বিশেষ জজ আদালত ও চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট কোর্টে আদালতে নির্ধারিত ইমেইলের মাধ্যমে জামিন আবেদন করা যাবে। ভার্চুয়াল জামিন শুনানীর সরকারি নির্দেশনা জারীর পর থেকে জেলা জজশীপ ও আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দের সাথে কয়েকদফা বৈঠকে কার্যপদ্ধতী ঠিক করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
আইনজীবীরা বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে নতুন বিষয় হওয়ায় অনেকেই মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানালেও উদ্যোগটি প্রশংসা করেছেন। এডভোকেট মেহেদী হাসান একটি ভাল উদ্যোগ শুরু হতে যা”েছ। তবে এর সফলতা কতখানি হবে তা পর্যবেক্ষণ করেই বলতে হবে।
আরেকজন আইনজীবী নাম প্রকাশ না করে বলেন বিষয়টি রপ্ত করতে এখনও সময় লাগবে। সবাই সমানভাবে এতে সঢল অংশ নিতে নাও পারতে পারেন। তিনি বিষয়টিতে সবার সহযোগীতার মনোভাবের উপর জোর দেন।
অনেক বিচার প্রার্থী সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
এমনই একজনের সাথে কথা হয় গতকার আদালতে। বিচার প্রার্থী স্বপন আলী বলেন করোনা ভাইরাস শুরুর আগে আমার এক নিকট আত্মীয় সামান্য অপরাধে জেল হাজতে আছে, কোর্ট বন্ধ থাকায় বের করতে পারছি না। তিনি সরকারে ভার্চুয়াল কোর্ট চালুর বিষয়টির প্রশংসা করেনে।
ভার্চুয়াল জামিন শুনানী বিষয়ে কুষ্টিয়া জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারন সম্পাদক এ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মাদ আবু সাঈদ বলেন সরকারি সিদ্ধান্ত মেনে আমরা আইনজীবীরা ভার্চুয়াল জামিন শুনানীতে অংশগ্রহন করবো। আইনজীবীদের অনেকে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারে কমপারদর্শী হলেও ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে সকলকে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার রপ্ত করার পরামর্শও দেন তিনি।
এদিকে ভার্চুয়াল কোর্ট এর ২১ দফা ‘বিশেষ প্র্যাকটিস নির্দেশনায়’ অধস্তন আদালতের জামিন শুনানির পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়। আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ ২০২০ এর ৫ ধারার ক্ষমতাবলে করোনায় নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিতকল্পে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আকবর আলী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে রোববার (১০ মে) এই নির্দেশনা জারি করা হয়।
নির্দেশনায় বলা হয়, অধস্তন আদালতে শুধু ভার্চ্যুয়ালি জামিন সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানি হবে। যোগাযোগের জন্য প্রত্যেক আদালতের একটি ই-মেইল আইডি ও নিজস্ব ফোন নম্বর থাকবে, যা আইনজীবী সমিতিকে সরবরাহ করতে হবে। জামিন শুনানির জন্য দালিলিক কাগজাদি এবং ওকালতনামা আদালতের নির্ধারিত ই-মেইল আইডিতে ই-ফাইলিংয়ের মাধ্যমে জামিনের আবেদন দাখিল করতে পারবেন।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়, ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শুনানি আদালত চলাকালে অনুষ্ঠিত হবে। শুনানি গ্রহণ, শুনানির তারিখ ও সময় অনলাইন প্লাটফর্মে ব্যবহৃত হবে ও কজলিস্টের পোর্টালে থাকবে, যা মোবাইল ও ই-মেইলের মাধ্যমে উভয়পক্ষের কৌশলীকে অবহিত করতে হবে।
গৃহীত আবেদনের ওপর একটি ভিডিও কনফারেন্সিং কেস নং (ভিসি কেস নং) ব্যবহৃত হবে এবং পরবর্তী সব প্রয়োজনে এই নম্বর ব্যবহৃত হবে। আবেদন গৃহীত হওয়ার পর আবেদনকারী অথবা তার আইনজীবী আদালতে ও প্রতিপক্ষের ই-মেইলে ২৪ ঘণ্টা আগে ইমেজ আকারে ১০ এমবির মধ্যে পাঠানো হবে।
আদালত কর্তৃক নির্ধারিত ভিডিও কনফারেন্সিং প্লাটফর্ম জুম, গুগল মিট বা মাইক্রোসফট টিম ব্যবহার করে উভয়পক্ষের আইনজীবী শুনানিতে অংশ নেবেন। শুনানির ১৫ মিনিট আগে আইনজীবী ও প্রয়োজনে তার সহায়ক আইনজীবী আদালতের কার্যক্রমে অংশ নেবেন। ভিডিও কন্ট্রোলর“ম থেকে ১৫ মিনিট ভিডিও কনফারেন্সিং ব্যব¯’ার কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হবে।
শুনানিকালে স্ক্রিন শেয়ার অপশন থেকে গুর“ত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট শেয়ার করতে হবে এবং মামলা সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র সংযুক্তি আকারে আদালতের ই-মেইলে পাঠাতে হবে, যার একটি কপি প্রতিপক্ষের আাইনজীবীকেও দিতে হবে। শুনানির ফলাফল তাৎক্ষণিকভাবে জানানো সম্ভব না হলে ই-মেইলে ও খুদে বার্তার মাধ্যমে উভয়পক্ষের আইনজীবীকে জানাতে হবে।
জামিন হলে বন্ড ও রিলিজ অর্ডার পূরণ করে স্ক্যানকপি আদালতের ই-মেইলে পাঠাতে হবে। বিচারক বেইল বন্ড ও রিলিজ অর্ডার এক কপি প্রিন্ট করে অফিসিয়াল ফাইলে সংগ্রহ করবেন। আর এক কপি জেল সুপারের অফিসিয়াল মেইলে পাঠাবেন। আদালতের আদেশে সংক্ষুব্ধ হলে যে কোনো পক্ষ ফটো সার্টিফাইং কপি সংগ্রহ করে উ”চতর আদালতে যেতে পারবেন। দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করতে হবে এবং কেউ শুনানির কোনো অংশ রেকর্ড করলে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার অভিযোগে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শুনানিকালে বিচারক ও আইনজীবীকে প্রচলিত কোর্ট ড্রেস পড়তে হবে, তবে গাউন না পরলেও চলবে। ভার্চ্যুয়াল শুনানিকালে নিরব”িছন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকতে হবে। কেউ শুনানিকালে বি”িছন্ন হলে তাকে পুনরায় সংযুক্ত করতে হবে। সব ধরনের কোলাহল পরিত্যাগ করতে হবে। অন্য সব মোবাইল ফোনের সাউন্ড মিউট রাখতে হবে। কারিগরি সমস্যার কারণে কোনো পক্ষের আইনজীবী যুক্ত হতে না পারলে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের জন্য পরবর্তীতে আবার তারিখ নির্ধারণ করতে হবে।
শুনানিকালে কোনো প্রতারণা, মিথ্যা বর্ণনা ও জাল সাক্ষ্য প্রমাণ দিলে ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধি বা ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কার্যধারা গ্রহণ করা যাবে। নির্দেশনায় বর্ণিত হয়নি এমন বিষয় উদ্ভূত হলে আদালত প্রচলিত আইন অনুসারে আদালত পরিচালনা পদ্ধতি নির্ধারণ করবেন। ভার্চ্যুয়ালি শুনানির ক্ষেত্রে আইনজীবীরা নির্দেশিকা অনুসরণ করবেন।
Leave a Reply