October 12, 2024, 8:55 am
একটি দৈনিক কুষ্টিয়া প্রতিবেদন//*/
//মসজিদ ভাঙে ধার্মিকেরা,মন্দির ও ভাঙে ধার্মিকেরা তারপর ও তারা দাবী করে তারা ধার্মিক আর যারা ভাঙাভাঙি তে নেই তারা অধার্মিক বা নাস্তিক//
বাংলাদেশের প্রধান প্রথাবিরোধী এবং বহুমাত্রিক লেখক হুমায়ূুন আজাদের জন্মদিন। ১৯৪৭ সালের এপ্রিল ২৮মুন্সিগঞ্জ জেলার বিক্রমপুরের রাড়িখালে তাঁর জন্ম। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, সমালোচক, গবেষক, ভাষাবিজ্ঞানী, কিশোর সাহিত্যিক এবং রাজনীতিক ভাষ্যকার। তিনি বাংলাদেশের প্রধান প্রথাবিরোধী এবং বহুমাত্রিক লেখক যিনি ধর্ম, মৌলবাদ, প্রতিষ্ঠান ও সংস্কারবিরোধিতা, নিরাবরণ যৌনতা, নারীবাদ, রাজনৈতিক এবং নির্মম সমালোচনামূলক বক্তব্য দিয়েছেন। কাঁপিয়ে দেন একটি আপাদমন্তক পিছিয়ে পড়া সমাজের ভিত। জাগিয়ে তোলেন অসংখ্য মানুষকে।
অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৭০টির বেশি — ১০টি কাবিতার বই, ১৩টি উপন্যাস, ২২টি সমালোচনা বই ৮টি কিশোরসাহিত্য, ৭টি ভাষাবিজ্ঞান বিষয়ক কই তাঁর জীবদ্দশায় এবং মৃত্যুর অব্যবহিত পরে প্রকাশিত হয়। তাঁকে ১৯৮৬ সালে বাংলা অ্যাকাডেমি পুরস্কার এবং ২০১২ সালে সামগ্রিক সাহিত্যকর্ম এবং ভাষাবিজ্ঞানে বিশেষ অবদানের জন্যে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করা হয়।
হুমায়ুন আজাদ ছিলেন স্বঘোষিত নাস্তিক। তাঁর অন্যতম প্রণোদনা ছিল প্রথা-বিরোধিতা। কবিতা, উপন্যাস ও রচনা সর্বত্রই তিনি প্রথাবিরোধী ও সমালোচনামুখর। সর্বপ্রথম গুস্তাভের আদলে ১৯৯১ প্রকাশিত ‘প্রবচনগুচ্ছ’ এ দেশের শিক্ষিত পাঠক সমাজকে আলোড়িত করতে সক্ষম হয়েছিল। একটি বৈষম্যহীন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তাঁর স্বপ্ন ছিল। সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিকেই তিনি মুক্ত মানবের মুক্ত সমাজ গড়ার পক্ষে অনুকূল বলে মনে করতেন।
১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় প্রবন্ধের বই ‘নারী’। আর এই বইয়ের প্রকাশের পর থেকেই তিনি মৌলবাদীদের তীব্র রোষানলে পড়েন। মৌলবাদীদের চেষ্টার ফলে ১৯৯৫ সালে ‘নারী’ বইটি নিষিদ্ধ করতে বাধ্য হয় তৎকালীন বাংলাদেশ সরকার। ৪ বছর পর ২০০০ খ্রিস্টাব্দে বইটি আবার পুনর্মুদ্রিত হয়। তাঁর ‘আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম’ বইতে স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের দূরব¯’ার সাহসী বর্ণনা আছে। বইটি অমর।
২০০৪ খ্রিস্টাব্দের ২৭ ফেবব্রুরি বইমেলা থেকে বেরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিজের বাসায় যাওয়ার পথে ঘাতকদের আক্রমণে মারাত্মক জখম হন তিনি।কিন্তু এর পর আর বেশি দিন বাঁচেননি তিনি। ৭ আগস্ট জার্মান কবি হাইনরিখ হাইনের ওপর গবেষণা বৃত্তি নিয়ে জার্মানি যান। ১২ আগস্ট নিজের ফ্ল্যাটে তাঁকে মৃত অব¯’ায় পাওয়া যায়।
বিচিত্র লেখায় সিদ্ধ চিলেন আজাদ। তকবে কবিতা ছিল হুমায়ুন আজাদের প্রথম এবং শেষ প্রেম। এখানেও বিষয় বৈচিত্র। প্রেম, কাম, ক্রোধ, দর্শন, সংকেত, ইঙ্গিত, বাস্তবতা, দৃশ্য-অদৃশ্য কত বিষয়! সময়, সমাজ সংঘ- সব দেখার চোখটি ছিল স্বচ্ছ এবং বহুরৈখিক। অভিজ্ঞতা এবং উপলব্ধি কতটা গভীর হলে লিখতে পারেন- ‘আমি জানি সব কিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে/নষ্টদের দানবমুঠোতে ধরা পড়বে মানবিক/সব সংঘ পরিষদ; চলে যাবে অত্যন্ত উল্লাসে/চলে যাবে এই সমাজ-সভ্যতার সমস্ত দলিল’।
শুধু নেতিবাচকতা বা আশঙ্কার কথা নয়, সম্ভাবনার কথাও বলেছেন আজাদ। তার উ”চারণ কাল ছুঁয়ে যায়। ‘ভালো থেকো হুমায়ুন আজাদের একটি দীর্ঘ কবিতা, যেখানে তিনি বারবার শুভ কামনাই উচ্চারণ করেছেন। সংবেদনশীলতার মুগ্ধ উ”চারণের পর বহু কবিতা আছে, সেগুলো আমাদের সমকালীন কবিতা সরণিকে বর্ণময় করেছে। তার প্রেমের কবিতাংশ এবং প্রবচনগুলো মানুষের মুখে মুখে ফেরে। হুমায়ুন আজাদ পাঠে আমরা মনন চর্চা, সমাজ রাজনীতি ও সংস্কৃতির হাজারো বিষয় উপলব্ধি করার সুযোগ লাভ করছি। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের পাঠক হুমায়ুন আজাদকে গভীর অন্বেষণে দীর্ঘদিন মনে রাখবেন।
Leave a Reply