December 14, 2024, 9:46 am
দৈনিক কুষ্টিয়া প্রতিবেদক: স্বতন্ত্র সত্তার কবি, ছড়াকার, সংগঠক ও চিন্তবিদ নাসের মাহমুদ মৃত্যুবরণ করেছেন। শুক্রবার রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে সত্তরের দশকের জনপ্রিয় এ ছড়াকারের মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তিনি ছিলেন ৬৪তে।
১৯৫৬ সালের ১লা জুলাই তিনি পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা মরহুম শাহ লুৎফর রহমান ও মা সুফিয়া রহমান। পৈতৃক বাড়ি রাজবাড়ী জেলার পাংশার উপজেলার ভাতশালা গ্রামে।
নাসের মাহমুদের ছেলেবেলা ও কৈশোর কেটেছে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন শহরে। তিনি একাধারে থেকেছেন করাচি, কোয়েটা, লাহোর, মুলতান, পেশোয়ার, ঢাকা, চট্টগ্রাম, চাঁদপুরের ধনাগোদা। তাঁর জীবনের একটি বৃহৎ সময় তিনি কাটিয়েছেন কুষ্টিয়ায় ও পাংশার ভাতশালা গ্রামে। শেষ জীবনে তিনি বসবাস করতেন ঢাকায়।
‘শেষ বয়সে নাসের স্নায়ুরোগ এবং স্মৃতিভ্রস্টতায় ভুগছিলেন।
নাসের মাহমুদকে বলা হয় স্বভাব ছড়াকার। তাঁর ছড়াতে ছন্দের যাদু ছিল ; কঠোর বাস্তবতা ছিল যার উপজীব্য। অন্যদিকে বিষয় বৈচিত্র্যে ছিল আধুনিকতা। ছড়ায় তার চিন্তা ছিল সমকালীন। কারিগরি কুশলতার কারনে তাঁর বিষয়বস্তু কখনই প্রাচীনমুখি হবার ঝুঁকি একেবারেই নেই। নাসের মাহমুদের ছড়ার আরেকটি বড় দিক হলো যুক্তিবাদিতা। জ্ঞানের প্রাবল্যের কারনে প্রতিটি ছড়াতেই কাজ করেছে অসম্ভব যুক্তিবাদিতা। কোন কিছু খন্ডন বা জোড়া লাগানো বা কোনকিছুকে ধুয়ে সাফ করার কাজে তিনি ব্যবহার করতেন এ যুক্তিবাদিতা। তার ছড়ায় এসেছে রাজনীতি, গনতন্ত্র, অর্থনীতি, সমাজনীতিসহ বিবিধ বিষয়াবলী।
নাসের মাহমুদ এক ঐতিহ্যবাহি পরিবারের সন্তান। তার সহোদরেরা স্ব স্ব মহিমায় দেশে বিদেশে প্রতিষ্ঠিত। তার এক ভাই বর্তমানে চট্টগ্রাম সেনানিবাসের জিওসি মেজর জেনারেল মতিউর রহমান জুয়েল। অন্য ভাইয়েরাসব ব্যবসায়ী ও আমেরিকা প্রবাসী।তার দু’সন্তান কুশল ও সুফল।
ছাত্র রাজনীতিতে সর্বদায় সক্রিয় ভুমিকা রেখেছেন নাসের মাহমুদ। ছাত্র ইউনিয়ন, যুব ইউনিয়ন, খেলাঘর, উদীচী ও অঙ্গীকার চলচ্চিত্র সংসদ যুক্ত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু পরিষদ, জাতীয় কবিতা পরিষদ ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের প্রথম সারির নেতাও ছিলেন তিনি। বাম ঘরানার নাসের মাহমুদ সাম্যবাদী সমাজের স্বপ্ন দেখতেন। তিনি ছিলেন আপাদমস্তক একজন প্রগতিশীল চিন্তার মানুষ।
নাসের মাহমুদ বাংলাদেশ ছড়া একাডেমীর উদ্যোক্তা পরিচালক। বাংলাদেশ শিশুসাহিত্য একাডেমী (চট্টগ্রাম), বাংলাদেশ লিমেরিক সোসাইটি (চট্টগ্রাম), লালন একাডেমী (কুষ্টিয়া), বাংলাদেশ রেডক্রস সোসাইটি (কুষ্টিয়া)-র জীবন সদস্য ও বাংলাদেশ রাইটার্স কপিরাইট সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক।
নাসের মাহমুদ স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। এসময়ে তিনি কুষ্টিয়াতে তাকতেন। সে সময়ে তার লেখা ছড়্ াসময়ের গন্ডি পেরিয়ে যায়।
নাসের মাহমুদ ছড়ার পাশাপাশি একাধারে লিখেছেন মৌলিক শিশুতোষ বই, কবিতা গ্রন্থ, আছে গল্প নিয়ে সম্পাদিত কিছু গ্রন্থ। দেশের প্রায় সকল দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক পত্রিকায় প্রচুর লেখা আছে তাঁর। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ২৭টি। এর মধ্যে , ছড়ার বই ১২টি, কবিতা ও ছড়াকাহিনীর বই একটি করে, যৌথছড়ার বই ৩টি ও সম্পাদিত বই ১০টি।
নাসের মাহমুদ ছড়া সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্মৃতিপদক ও বিশেষ সম্মাননা ২০১৪ লাভ করেন।
নাসের মাহমুদের কৈশর, যৌবনের ও শেষ জীবনেরও প্রিয়জন আহসানুল হক নবাব নাসের মাহমুদকে দেশের অন্যতম একজন ছড়াকার হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন ছড়ার মধ্য দিয়ে নাসের মাহমুদ সমাজের নানা বৈষম্য, অসঙ্গতি, চাওয়া পাওয়াকে ফুটিয়ে তুলেছেন যা বিরল।
Leave a Reply